images

অর্থনীতি

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়ে শক্তি বাড়ছে ব্যাংক খাতে

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন

২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২০ এএম

*নো-ফ্রিলস হিসাব সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ
*তিন মাসে আমানত বেড়েছে ১৪০ কোটি টাকা
*কৃষকের আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি
*চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ

দেশে পতিত আওয়ামী সরকারের সময়ে নজিরবিহীন লুটপাটের পাশাপাশি বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরই বিত্তশালীরা ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে বিপরীতে চিত্র দেখা গেছে প্রান্তিক মানুষদের সঞ্চয়ে। ২০২৫ সালের জুন শেষে স্বল্প আয়ের মানুষের সঞ্চয় ও হিসাব সংখ্যা দুটোই বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য বলছে, মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোতে নো ফ্রিল (এনএফএ) হিসাব সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭০টি। আর চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৬ হাজার ৭৯৯টি। সেই হিসাবে তিন মাসে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার ২৯টি।

২০১০ সালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। এগুলোকে নো-ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট (এনএফএ) বলা হয়। তবে, স্কুল ব্যাংকিং ও কর্মজীবী শিশুদের অ্যাকাউন্ট এই হিসাবের বাইরে। এই নো-ফ্রিলস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্স বা সার্ভিস চার্জ বা ফি নেই। সমাজের সব স্তরের মানুষের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

এছাড়া, সাধারণ চলমান সঞ্চয় হারের তুলনায় নো-ফ্রিলস অ্যাকাউন্টগুলোতে বেশি হারে সুদ দেওয়া হয়। এই ব্যাংকিং সুবিধাভোগীর মধ্যে আছেন- কৃষক, পোশাক শ্রমিক, অতি দরিদ্র, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরাসহ অনেকে।

5

তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকা দিয়ে খোলা স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। আর গত জুন শেষে এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকা দিয়ে খোলা হিসাবে আমানত বেড়েছে ১৪০ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাস আগেও দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিলো। তবে এরপরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংকট কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। আর এতেই দেশের ব্যাংকিং খাতের উপর মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এর ফলে স্বল্প আয়ের মানুষেরাও ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে ঠিক করতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকে আমানত ফিরতে শুরু করেছে।

তথ্য বলছে, গত মার্চ শেষে এসব হিসাবের মাধ্যমে আসা মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জুন শেষে এসব হিসাবের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৮০০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিনমাসে এসব হিসাবে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২৩ কোটি টাকা।

এছাড়া, চলতি বছরের মার্চ শেষে নো-ফ্রিলস হিসাবের আওতায় কৃষকদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৭১৮ কোটি, অতি দরিদ্রদের ২৩১ কোটি, পোশাকশ্রমিকদের ছিল ৪৬৭ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাবে ১০১৩ কোটি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের হিসাবে ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা।

জুন শেষে কৃষকদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি, অতি দরিদ্রদের দাড়িয়েছে ২৪৬ কোটি, পোশাকশ্রমিকদের ছিল দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাবে ৯৬১ কোটি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের হিসাবে ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ব্যাংক খাতে অস্থিরতার বিগত ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এদেশে প্রান্তিক মানুষের আমানত উচ্চ বিত্তরা সবসময় লুটপাট করেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সর্বস্বান্ত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ব্যাংক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা ফিরেছে। যা ইতিবাচক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

টিএই/এএস