images

অর্থনীতি

সেই পাঁচ ব্যাংকের ঋণের ৭৬ শতাংশই খেলাপি

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন

০৯ জুন ২০২৫, ১০:০৫ পিএম

  • পাঁচ ব্যাংক মিলে করা হচ্ছে একটি
  • ঋণ বিতরণ ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি
  • খেলাপি ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সীমাহীন লুটপাটের শিকার হওয়া পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু করে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করার একটি রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে।  একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে– সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও এক্সিম। তবে এই পাঁচ ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ৭৬ শতাংশ।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের (একিউআর) জন্য দুটি আন্তর্জাতিক অডিটর নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমানতকারীর আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাতে দুরাবস্থা উত্তরণের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানো হবে একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য। ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী এসব দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তি করা হবে। তবে জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক যদি সরকার থেকে নেওয়া বিশেষ ধারের টাকা ফেরত দিয়ে নিজেরা চলতে পারে তখন ওই ব্যাংক চাইলে একীভূতকরণ থেকে বাদ যেতে পারে।

আরও পড়ুন

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় শরিয়াহ ব্যাংকগুলো, ফিরছে আস্থা

তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এই পাঁচটি ব্যাংকের মোট আমানত রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। একিউআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

Khelapi

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে একীভূতকরণ নিয়ে সাড়ে তিন মাসের একটি রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের বিষয়টি জানানো হয়েছে। কীভাবে একীভূতকরণ করা হবে সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপ শেষে ব্যাংকগুলোকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই ব্যাংকগুলোর এমডিদের চুক্তি বাতিল হবে। আর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বাছাই করা সদস্যসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি পর্ষদ গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ব্যাংকগুলো পরিচালিত হবে। এই সাড়ে তিন মাসে ব্যাংকগুলোকে  নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে বিভিন্ন তথ্য যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি টিম কাজ করবে। টিমে ব্যাংকগুলো থেকেও যোগ্য লোক দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

নতুন রেজুলেশন: কী প্রভাব ফেলবে ব্যাংক খাতে?

বৈঠকে জানানো হয়, পাঁচটি ব্যাংক মিলে একটি শক্তিশালী ইসলামি ব্যাংক গঠন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য। মালিক পক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চরম দুরবস্থায় পড়লেও এসব ব্যাংকের আশার দিক হিসেবে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সারাদেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। যে কারণে কোনো ব্যাংক থেকে কাউকে ছাঁটাইয়ের দরকার হবে না। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ পাওয়াদের নতুন করে যোগ্যতা যাচাই করা হবে। আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের জন্য ঋণ আদায় জোরদার এবং সরকার থেকে কয়েক ধাপে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া একই এলাকায় একাধিক শাখা থাকলে তা অন্য জায়গায় স্থানান্তর এবং কিছু শাখা বন্ধ করা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অধ্যাদেশের আলোকেই পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে শক্তিশালী একটি ব্যাংক করা হবে। এতে সহযোগিতা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষা দিতেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

Taka

সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যেক আমানতকারীর অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিলেও নতুন অধ্যাদেশের আলোকে আগামী ১৫ অক্টোবরের পর প্রথমে এসব ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংকগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে। এ সময়ে প্রতিটি ব্যাংকের খারাপ সম্পদ ও ভালো সম্পদ পৃথক করা হবে। ভালো সম্পদ এক দিকে এনে ব্রিজ ব্যাংকের অধীনে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

বিপুল পুনঃতফসিলেও বেসামাল খেলাপি ঋণ

এ বিষয়ে ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান ঢাকা মেইলকে বলেন, পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একত্রিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা একটি শক্তিশালী ইসলামি ব্যাংক করা হবে। ব্যাংক খাতের জন্য যা ইতিবাচক। আমানতকারীদের কোনো ভয় নেই। আমানতকারীর সুরক্ষা দেওয়া এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।

টিএই/জেবি