images

অর্থনীতি

সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনা কীভাবে গায়েব হলো?

ঢাকা মেইল ডেস্ক

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২০ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না- এমন বক্তব্য দেওয়ার পর এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ব্যাংকের সোনা কীভাবে গায়েব হলো সেটি নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, ঘটনাটি তিন বছর আগের এবং প্রায় আট হাজার ভরি সোনা কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া গ্রাহকরা তুলে নিয়েছিল। পরে এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে, যা এখনো বিচারাধীন আছে।

ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসানুল গনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ওই ঘটনায় ব্যাংকের একটি চক্র জড়িত ছিল এবং তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘ঘটনাটি সত্যি। ব্যাংকের কিছু লোক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, সমবায় ব্যাংক মূলত একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। সমবায় আইনের বিধান অনুযায়ী এটি সমবায় খাতে অর্থ সরবরাহকারী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি সমবায় সমিতির ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ দিতে পারে।

উপদেষ্টা কী বলেছেন?

কুমিল্লায় বার্ডের অনুষ্ঠানে গিয়ে এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সমবায় ব্যাংকের বহু সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যারা একসময় ব্যাংকে ছিলেন তারাই এগুলো বেদখল করে রেখেছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

এস আলমের গৃহকর্মী মর্জিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন কোটি টাকা

৬ ব্যাংকে জমা এস আলম গ্রুপ ও পরিবারের ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা!

‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কোথায় কী অবস্থা রয়েছে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে,’ বলেছেন তিনি।

তার বক্তব্য দেওয়ার পরপরই বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন তথ্য মনে করে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন।

BBB

পরে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করলে এর কর্মকর্তারা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেন যে, ঘটনাটি ২০২০ সালের এবং এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ব্যাংকেরই আটজন কর্মকর্তার নামে মামলা করেছে দুদক, যা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে।

কীভাবে গায়েব হলো এত সোনা

ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংকের তরফ থেকে দুদককে জানানো হলে তারা তদন্ত শুরু করে। তদন্তের পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তখনকার চেয়ারম্যানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির একজন উপ-পরিচালক। এরপর পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

তখন মামলায় অভিযোগ করা হয়, এসব ব্যক্তি ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা সাত হাজার ৩৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে, যার তখনকার বাজার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৪০ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ টাকা। এর মধ্যে, ভুয়া ব্যক্তিকে গ্রাহক সাজিয়ে প্রায় সাড়ে এগারো কোটি টাকার সোনা তারা আত্মসাৎ করেন। এ মামলা এখনো চলছে।

কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি নামের একটি সমবায় সমিতির সদস্যরা মোট প্রায় ১২ হাজার ভরি সোনা ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করেছিল। এক পর্যায়ে ওই সমবায় সমিতি দেউলিয়া হয়ে যায়। এর মধ্যে করোনা মহামারি চলে আসে। সবমিলিয়ে যথাসময়ে ঋণ শোধ না করায় এক পর্যায়ে ব্যাংক সেই সোনা নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

আরও পড়ুন

১৫ বছরে ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ ৯২ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি

টাকা পাচারকারীদের স্বস্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না: গভর্নর

‘ব্যাংক তখন বলেছিল যে, সমিতির সদস্যরা জমা রাখা সোনা লোন পরিশোধ সাপেক্ষে নিতে চাইলে নিতে পারবে। এ সুযোগটি নিয়েছিল কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা ভুয়া ব্যক্তিকে ওই সমিতির সদস্য সাজিয়ে ভুয়া রশিদ বানিয়ে লোন হিসেবে নেওয়া টাকা জমা দিয়ে সোনা তুলে নেয়,’ বলছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আহসানুল গনি।

মূলত সোনার বাজার দর অনেক বেশি হওয়ায় লোন শোধ করেই ভুয়া ব্যক্তিরা সোনা তুলে নিয়ে লাভবান হয়েছিল বলে জানান আহসানুল গনি। ‘মামলার চূড়ান্ত চার্জশিটে সাবেক চেয়ারম্যান নাম ছাড়া বাকিদের নাম রেখেছিল দুদক। চার্জশিটে নাম থাকা ব্যক্তিরা এখন জামিনে আছেন। তবে মামলাটি বিচারাধীন আছে,’ বলছিলেন তিনি। অর্থাৎ ওই ব্যাংকের সোনা নিয়ে যা ঘটেছে তা হলো নারায়ণগঞ্জ কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির সদস্যরা সোনা বন্ধক রেখে লোন নিয়েছিল।

পরে ওই নামেই ভুয়া রশিদ ও কাগজ তৈরি করে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লোনের টাকা ফেরত দিয়ে সোনা তুলে নেয় একদল ব্যক্তি। প্রায় আট হাজার ভরি তুলে নেওয়ার পর ব্যাংকের মধ্যে প্রকাশ হয়ে যায় ঘটনাটি।

‘তারা যেই নামের বিপরীতে যত টাকা লোন নিয়েছিল সেই টাকা কিন্তু দিয়েছিল ব্যাংককে। কিন্তু যারা এসব নামে এটি করেছেন তারা ছিল ভুয়া,’ বলছিলেন ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক। -বিবিসি বাংলা

জেবি