এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমের পরিবার ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে বলে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বর্তমানে এসব হিসাবের স্থিতি ২৬ হাজার কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংক এখনও লেনদেনের তথ্য দাখিল না করায় পরিমাণ চূড়ান্তভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যাংকগুলো হলো— ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। পাঁচটি ব্যাংক এর আগে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এবং আহসান এইচ মনসুরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
১৪ আগস্ট, এনবিআরের অধীন ইনকাম ট্যাক্স জোন-১৫ থেকে ৯১টি ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এস আলম, তার পরিবার এবং তাদের ব্যবসায়িক সত্ত্বাগুলোর অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এক মাস পর, বিপুল পরিমাণ লেনদেনের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে।
ট্যাক্স জোন-১৫ এর কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, ‘এস আলমের পরিবারের সদস্য এবং গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব যাচাই করা হচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ঋণ ও বিক্রির অর্থসহ এসব ব্যাংকে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা জমার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এর মধ্যে কত টাকা ঋণের, তা এখনও নির্ধারণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ‘এস আলমের পরিবারের সদস্য ও ব্যবসায়িক সত্ত্বার হিসাবের বর্তমান স্থিতি ২৬ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে।’ সাধারণভাবে পাঁচ বছরের তথ্য চাওয়া হয়, তবে এই ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সময়ের তথ্যও থাকতে পারে।
বিজ্ঞাপন
নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, কর বিভাগ অতীতের যে কোনো সময়ের তথ্য চাইতে পারে।
এস আলমের বিরুদ্ধে অন্যান্য তদন্তও চলছে। এনবিআর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন অনিয়ম অনুসন্ধান করছে।
ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। ৫ সেপ্টেম্বর, মাসুদ জানায়, ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের অর্ধেকের বেশি এস আলম গ্রুপ নিয়েছে। জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশি অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংঘবদ্ধ অপরাধ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।
৩১ আগস্ট সিআইডির মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা আজাদ রহমান জানান, সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এই অনুসন্ধান করছে। ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এস আলম গ্রুপ ফায়দা লুটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
১৫ আগস্ট, একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ বন্ধ থাকা কারখানা, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি একটি টিনের দোকানের নামে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
এইউ