images

সারাদেশ

ঘোড়ার গাড়ি যেখানে ভরসা

জেলা প্রতিনিধি

১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৩:৩৭ পিএম

images

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সুবিধা ও উন্নয়ন বঞ্চিত চরাঞ্চলের বাহনের মাধ্যম একমাত্র ঘোড়ার গাড়ি। চরাঞ্চলের কৃষকদের কাছে এখনও যমুনা নদীর চরাঞ্চলে একমাত্র বাহন হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। উঁচু-নিচু বালুচরে ছুটে চলছে এই গাড়ি। আনা-নেওয়া করা হচ্ছে মালামাল।

শুধু তাই নয়, ঘোড়ার গাড়িতেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে আসা-যাওয়া করছেন চরের সহজ-সরল মানুষ। আর এই গাড়ি চালিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন চরের অনেক বেকার যুবক।

শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ির বিকল্প হিসেবে হেঁটেই নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটান চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। হেঁটে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন দিন দিন বাড়ছে।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন যমুনা নদীর চরে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে যেকোনো ধরনের মালামাল পরিবহনের বাহন হিসেবে একমাত্র সম্বল ঘোড়ার গাড়ি। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চলাচল করেন যমুনার চরাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু বর্ষার পর বালুচরে চলা খুবই দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হয় ঘোড়ার গাড়ি। একটি গাড়িতে ২৭ মণ পণ্য ও ১২-১৪ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।

>> আরও পড়ুন : যানজটের শহর নওগাঁ

মিনিবাসের পুরাতন রিং, টায়ার ও টিউবের ওপর ভর করে চলে ঘোড়ার গাড়ি। চরের কাঠমিস্ত্রিরাই বানান এসব গাড়ি। একেকটিতে খরচ পড়ে ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো। যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া নেই এই পরিবহনে তাই পরিবেশবান্ধব ঘোড়ার গাড়ি চরাঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়।

উপজেলার চালুয়াবাড়ি, কাজলা, কর্ণিবাড়ি, বোহাইল ও হাটশেরপুর ইউনিয়নের প্রায় ১১০টি যমুনার চরে ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কৃষিপণ্য ও যাত্রী নিয়ে চলাচল করে এসব গাড়ি। পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হয় ঘোড়ার গাড়ি।

কথা হয় ঘোড়ার গাড়িচালক বানিয়া পাড়া চরের ২০ বছর বয়সী ওয়াস কোরনির সঙ্গে। তিনি বলেন, এ গাড়ি দিয়ে দৈনিক ১০০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করি। ঘোড়ার খাওয়ার খরচ ছাড়া তেমন খরচ নেই বলে আয় বেশি হয়। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে বেশ কয়েক বছর গাড়ি টানতে পারে ঘোড়াগুলো। তবে নিয়মিত ঘোড়াকে প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়াতে হবে। তা না হলে শক্তি হারিয়ে ফেলবে ঘোড়া। খাদ্য হিসেবে ধানের কুঁড়া, সরিষার খৈল, ছোলা, খেসারি কালাই, ভূষি ও চালের খুদ পছন্দ ঘোড়ার। সব মিলিয়ে ঘোড়া পালনে খরচও কম।

ওয়াস কোরনি বলেন, চরে ঘোড়ার গাড়ি সাত-আট মাস চলে। বন্যার সময় এই গাড়ি চলে না। তখন সংসারের অন্যান্য কাজ করি। আমাদের উপজেলায় কমপক্ষে ৫০০ ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। এক চর থেকে অন্য চরে ছুটে চলতে ভালোই লাগে।

>> আরও পড়ুন : ডাকাডাকি-লাফালাফিই ওদের প্রেমের আমন্ত্রণ

কাজলা ইউনিয়নের ময়ূরের চরের কৃষক মো. সুজা রহমান বলেন, চরাঞ্চলে অনেক বেশি কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু বালুপথ হওয়ায় পণ্য নিয়ে হাট-বাজারে যাতায়াত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে চরের কৃষকদের কাছে ঘোড়ার গাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম।পানি শুকিয়ে চর জাগলেই শুরু হয় কৃষকদের কাজ। এ সময় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করেন বালুর চরে ফসল ফলানোর স্বপ্ন নিয়ে। চরে সাধারণত বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, খেসারি ডাল, কাউন, বোরো ধান, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফসল চাষ করেন কৃষকরা। এ ছাড়া জ্বালানির কাজে ব্যবহার করার জন্য কাশফুলের শুকনো খড় সংগ্রহ করেন চরের বাসিন্দারা। উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার জন্য ঘোড়ার গাড়িই তাদের একমাত্র ভরসা। ঘোড়ার গাড়ির চালক হিসেবে রয়েছে বেশির ভাগ ২০ থেকে ২২ বছর বয়সের ছেলেরা।

কর্ণিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দিপন প্রামাণিক বলেন, চরে এটি একটি জনপ্রিয় বাহন। আমার ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। নান্দিনাচর, ডাকাতমারাচর, ইন্দুরমারাচর ও পূর্ব শনপোচাচরে নিয়মিতভাবে চলাচল করে এই দুরন্ত বাহন। রাস্তাঘাট না থাকায় চলাঞ্চলের অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়ির চালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছে এ চর থেকে ওই চরে।

প্রতিনিধি/এইচই