images

সারাদেশ

নীলফামারীতে ব্রিটিশ রানির বিলাসবহুল সেলুন কোচ

জেলা প্রতিনিধি

২৪ জুন ২০২২, ০৯:১৮ এএম

কোচ নম্বর ১২৬৫। পরিচিত প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচ নামে। যে কোচে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বেড রুম, রান্নাঘর, স্টাফ রুম, আধুনিক বাথরুম, গোসলের ঝরনা ছাড়াও রয়েছে প্রেসিডেন্ট কনফারেন্স রুম । বলছিলাম, রানি এলিজাবেথের ভারতবর্ষ ভ্রমণের জন্য ১৯২৭ সালে তৈরি হওয়া বিলাসবহুল রেলওয়ে প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচের কথা। যেটি বর্তমানে সংরক্ষিত রাখা আছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়।

আরও পড়ুন: দেড়শ বছরের সাক্ষী হয়ে আছে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ট্রেন

জানা  যায়, দেশভাগের পর বৃটিশ সরকার তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান রেলওয়েকে এই সেলুন কোচটি উপহার হিসেবে দিয়ে যায়। এরপর থেকে এটি শুধু মাত্র রাষ্ট্রপতির জন্য সংরক্ষিত থাকায় এর নাম হয় রেলওয়ে প্রেসিডেন্ট সেলুন। স্বাধীনতার পরে অনেক রাষ্ট্রপতি ভ্রমণ করেছেন এই ট্রেনে। ১৯৮১ সালে এটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়লে মেরামতের জন্য আনা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশেষায়িত এই কোচটি বর্তমানে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ রিপ্যায়েরিং এর অভ্যন্তরে রাখা হয়েছে। কোচটির ভেতরে প্রবেশ করতেই যেন মনে হবে কোনো এক আধুনিক বাসভবন। প্রবেশদ্বারেই আছে কোচটির ইতিহাস সংবলিত একটি ওয়ালবোর্ড। এক পা এগুলেই একটি কামরা এবং সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেই প্রেসিডেন্ট কনফারেন্স রুম। যেটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল, এখন এসি না থাকলেও শত শত বছর পরেও সচল আছে এর ইলেকট্রনিক ফ্যানগুলো।

আরও পড়ুন: লিটনের হাত ধরে কুষ্টিয়ায় ‘ইউটিউব ভিলেজ’, আছে পার্কও

কনফারেন্স রুম পেরিয়ে সামনে এগোলেই দুই বিছানার একটি বেড রুম। কাঠের বানানো আলমারি আর নকশাগুলো নজর কাড়বে সবার। সেখানে সাজসজ্জার জন্য আয়না ও বসার স্থানও আছে। বেডরুমের পাশেই তৎকালীন আধুনিক বাথ রুম, বেসিন, ও ঝরনাও আছে সেখানে। বাথরুম পেরিয়ে একটু সামনে এগুলেই স্টাফ রুম, সেখানেও রয়েছে শুসজ্জিত থাকার ব্যবস্থা ও এটাস্ট বাথরুম। মনোমুগ্ধকর একটি পরিবেশ, ভেতর থেকে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো কোচ। বাইরে থেকেও বোঝার উপায় নেই এই কোচের ভিতরের অবস্থা।

লাইটগুলো অচল হওয়ায় আলোর জন্য নতুন করে লাইট স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতিহাস ঐতিহ্যের এই সম্পদটিকে যাদুঘরই বলা চলে। অনুমতিক্রমে এটি দেখারও সুযোগ আছে সর্বসাধারণের।

আরও পড়ুন: 
মাটির দেয়াল-খড়ের ঘর রূপকথায় স্থান পাবে!

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ ইনচার্জ মোমেনুল ইসলাম বলেন, এটি ১৯২৭ সালে বৃটিশ নির্মিত বিশেষায়িত একটি কোচ। এই কোচটার যে বৈশিষ্ট্য হলো, এর ইন্টেরিয়র পুরোটা কাঠের। এখানে বৃটিশ রাণীর সভাকক্ষ আছে, বেডরুম আছে। বলা যায়, আধুনিক সব সুযোগ সুবিধাই আছে। এটি বর্তমানে ব্যবহার না হলেও, আমরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে রেখে দিয়েছি। যাতে আগামী প্রজন্মের লোক এটিকে দেখতে পারে এবং আমাদের যে যাদুঘর আছে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে অনুমতিক্রমে এটি দেখার সুযোগ আছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ডিভিশনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট সাদেকুর রহমান ঢাকা মেইলকে জানান, সর্বপ্রথম রাণী এলিজাবেথ এই সেলুনে কোচে ভ্রমণ করেন। পরবর্তীকালে এটা পরিবর্তিত হয়ে প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮১ সালে এটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। তৎকালীন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন যে, এটি যাদুঘর হিসেবে সকলের স্মৃতি হিসেবে থাকবে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এই সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এটি আমরা মেইনটেইন করে আসছি।

আরও পড়ুন: 
‘বউ ঠাকুরানীর হাটের’ সেই জমিদার বাড়ি এখন...

তিনি আরও বলেন, আমাদের ভবিষ্যত উদ্যেশ্য হচ্ছে যে আমারা বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে যদি বড় কোনো যাদুঘর করি, সে যাদুঘরের সামনে রেললাইন স্থাপন করে এই কোচ ও  স্টিম লোকোমোটিভসহ একটি বড় ধরনের স্থাপনা হবে।

প্রতিনিধি/এএ