শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘বউ ঠাকুরানীর হাটের’ সেই জমিদার বাড়ি এখন...

মাজহারুল হক লিপু
প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২২, ০৪:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

‘বউ ঠাকুরানীর হাটের’ সেই জমিদার বাড়ি এখন...
ছবি : ঢাকা মেইল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘বউ ঠাকুরানীর হাট’-এর সুরমার স্মৃতি বিজড়িত জমিদার বাড়িটির অবস্থান মাগুরার শ্রীপুরে। কারুকর্যময় এই স্থাপনাটি এখন ধ্বংসের মুখে। মাগুরা জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত প্রাচীন এ জমিদার বাড়িটির সিংহদ্বার এবং কয়েকটি কক্ষের নিদর্শন এখনও স্পষ্ট। অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে একটি সিন্দুক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নতুন প্রজন্ম এবং স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই এই স্থাপনাটিকে শুধু একটি জমিদার বাড়ির ধ্বংসস্তূপ হিসেবেই চেনেন। 
 
ইতিহাস গবেষকদের কাছ থেকে জানা যায়, পনেরশ' শতাব্দিতে নবাব আলী বর্দী খাঁর কাছ থেকে এ অঞ্চলের জমিদারি কিনে নেন সারদা রঞ্জন পাল। যশোরের প্রভাবশালী রাজা প্রতাপাদিত্যর ছেলে উদয়াদিত্যের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রীপুরের জমিদার সারদা রঞ্জন পালের কন্যা বিভা রানী পালের। প্রতাপাদিত্যের সহযোগীতায় সারদা রঞ্জন নির্মাণ করেন এই জমিদার বাড়ি। প্রতাপাদিত্য ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজা। আর সারদা রঞ্জন তার তুলনায় উদার মনের মানুষ। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে সারদার মেয়ে বিভা পালের সংসারে। পরবর্তীতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কাহিনীকে উপজীব্য করে রচনা করেন ‘বউ ঠাকুরানীর হাট’ নামে একটি উপন্যাস। যা পাঠকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।


বিজ্ঞাপন


কথা হয় শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজের স্নাতকের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। শরীফুল ইসলাম শিক্ষার্থী জানান, বাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। আর দশটি পুরাতন বাড়ি হিসেবেই এটিকে চেনেন।
magur jamidar bariশরীফুল বলেন, ‘আমরা শুনেছি এটি একটি জমিদার বাড়ি। কিন্তু এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানি না। বউ ঠাকুরানীর হাট উপন্যাসের নাম শুনলেও এর সঙ্গে এই বাড়িটির সম্পর্ক আছে কিনা তাও জানি না।’

শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আশরাফ হোসেন পল্টু বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বউ ঠাকুরানীর হাট উপন্যাসের সুরমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। উদায়াদিত্যও অবসর সময় কাটাতে স্ত্রীর সঙ্গে এখানে আসতেন বলে জানা যায়। এটি শুধু একটি জমিদার বাড়িই নয়, এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িত।’ 

শ্রীপুরের একটি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, ‘এমন একটি স্থাপনা অযত্নে ও অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। এটি পর্যটন বিভাগের আওতায় এনে সংস্কার করা হলে নতুন প্রজন্ম অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে।’

শ্রীপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক শিক্ষক বাংলা সাহিত্যের গবেষক ড. মাজেদা খাতুন বলেন, ‘বউ ঠাকুরানীর হাট উপন্যাসে উদায়াদিত্যের স্ত্রী সুরমাই মূলত এ জমিদার বাড়ির মেয়ে বিভা পাল। উপন্যাসেও বারবার বিভাকে বলা হয়েছে, শ্রীপুরের জমিদার বাড়ির কন্যা। ইতিহাসখ্যাত রাজা প্রতাপাদিত্য তার ছেলে উদায়াদিত্যকে শ্রীপুরের জমিদার সারদা রঞ্জনের মেয়ে সুরমার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে আমরা এ ইতিহাস তুলে ধরতে পারিনি। শেষ নিদর্শনটুকুও বিলীন হতে চলেছে।’


বিজ্ঞাপন


মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ‘মাগুরার পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে আমরা নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে শ্রীপুরের জমিদার বাড়ি সম্পর্কেও নানা তথ্য আমাদের এসেছে। আশা করছি, এই জমিদার বাড়িটি নিয়ে আমরা বড় কিছু করতে পারবো। ইতিমধ্যে আমরা তার উদ্যোগও গ্রহণ করেছি।’

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর