images

সারাদেশ

সাতক্ষীরা মেডিকেলে কেনাকাটা না করে ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ

জেলা প্রতিনিধি

২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ এএম

আটটি সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতির ভুয়া বিলের মাধ্যমে ক্রয় দেখিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের তিনজন ডাক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফটওয়্যার যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ঢাকা সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রাকিবুল হায়াত সম্প্রতি এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে মামলার এজাহারনামীয় আসামির মধ্যে চারজন ও তদন্তে নতুন করে উঠে আসা আরও চারজনের নাম দেওয়া হয়েছে। আদালতে অভিযোগপত্রটি আমলের জন্য ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, তেঁতুলিয়ায় চার ভুয়া সাংবাদিক আটক

দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রাকিবুল হায়াত বলেন, অভিযোগপত্রে নাম থাকা এজাহারনামীয় চার আসামি হলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের যৌথ মালিক মো. আব্দুস সাত্তার সরকার ও মো. হাসান হাবিব, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যালের মালিক মো. জাহির উদ্দিন সরকার ও ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক মো. আসাদুর রহমান। মারা যাওয়ায় এজাহারনামীয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার শেখ শাহজাহানের নাম বাদ দেওয়া হয়। অন্যরা হলেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার নারায়ণ প্রসাদ সান্যাল, শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শামসুর রহমান ও মেডিকেল কলেজটির স্টোরকিপার হাসান হাবিব।

thumbnail_সাতক্ষীরা-মেডিকেল-কলেজ

তিনি বলেন, কমিশনের নির্দেশে গত ১৪ আগস্ট সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তদন্তে নাম আসায় নতুন করে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়েছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার নারায়ণ প্রসাদ সান্যাল, শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শামসুর রহমান ও মেডিকেল কলেজের স্টোরকিপার হাসান হাবিব। সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগপত্রে নাম এসেছে এমনটি জানতে পেরে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সহযোগী অধ্যাপক ডা. রুহুল কুদ্দুসসহ চারজন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের আবেদন আমলে না নিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর পর পরই ওই চার আবেদনকারী উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। একপর্যায়ে আদালত দুদকের প্রধান কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে সম্প্রতি সশরীরে মহামান্য হাইকোর্টে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

টাঙ্গাইলে ৪ ক্লিনিক মালিককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বিধিবহির্ভূতভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতীত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ টাকার পিকচার আর্কির্ভিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স সিস্টেম (পিএসিএস) নামক সফটওয়্যারসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ কেনার উদ্যোগ নেন প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ শাহাজাহান আলী। এজন্য তিনি বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও সার্ভেকমিটি গঠনসহ ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করেন। পরদিন বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ঢাকার পুরানা পল্টনের মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার সরকার ও আহসান হাবিব এবং বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেলের স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকারের কার্যাদেশ পান। মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের আবেদনের ভিত্তিতে দরপত্রের বৈধতার মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই প্রায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের একটি পিকচার আর্কির্ভিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স সিস্টেম (পিএসিএস) সফটওয়্যারসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ সরবরাহের জন্য ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

thumbnail_Satkhira_Medical_College_logo

ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল পিইসএস সফটওয়্যারসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ সরবরাহের চালান ডা. শেখ শাহজাহানকে দেওয়া হয়। ৩ সেপ্টেম্বর মালপত্র বুঝে নেওয়ার জন্য কারিগরি সার্ভে কমিটি গঠন করেন। কমিটির সভাপতি হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রুহুল কুদ্দুস, সদস্য সচিব হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. সামছুর রহমান (শিশু) ও সদস্য হিসেবে সহকারী অধ্যাপক ডা. নারায়ণ প্রসাদ সান্যালকে (নাক, কান ও গলা) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মালপত্র বুঝে না পাওয়ার পরও ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সার্ভে সম্পন্ন করে চালানে স্বাক্ষর করেন সার্ভে কমিটির ওই তিন সদস্য। এরপর লেজারে লিপিবদ্ধ করার জন্য স্টোরকিপার আহসান হাবিবকে নির্দেশ দেন। দুদক ২০১৯ সালের ১৫ মে সরেজমিন তদন্ত করে ডা. শেখ শাহাজাহানের মেশিনারিজ কেনার যৌক্তিকতা ও ব্যবহারের নিয়মনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারেননি। দেখাতে পারেননি কোনো মালপত্র।

২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ওই সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়নি মর্মে প্রতীয়মান হয়। সেই অনুযায়ী সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ তৃতীয় কাস্টমার অ্যাকসেপ্টেন্স দেওয়ার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডা. রুহুল কুদ্দুস ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সুতপা চ্যাটার্জিকে কমিটির সদস্য করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান চলাকালীন ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আরও পড়ুন

জাল পাতা ও চুরিকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলা, ৮ জন আহত

সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, তিনজন ডাক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফটওয়্যার যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি আমল গ্রহণের জন্য ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ দিন ধার্য আছে। তিনি বলেন, অভিযোগপত্রটি আমল গ্রহণ হলে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। এরপর আদালত রায় শোনাবেন।

প্রতিনিধি/এসএস