images

সারাদেশ

‘আল্লাহ হামার ছেলেরে ফিরাইয়া দাও’

জেলা প্রতিনিধি

২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৩ পিএম

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটা সহিংসতায় নিহত মো. রাসেলের বাবা পিন্টু রহমান বলেছেন, ‘চার দিন ধরে হাসপাতালের বেডে কষ্টে কাতরাইছে। মৃত্যুর মুখোমুখি হওছে জ্যানেও ছেলের পাশে থাকতে পারিনি। কতই না কষ্ট প্যায়ে মারা গেছে। কতই না আর্তনাদ করিছে। ওরা হামার ছেলের বুকোত গুলি মারলো ক্যা। আল্লাহ হামার ছেলেরে ফিরাইয়া দাও। এমন কষ্ট আল্লাহ য্যান আর কাউকে না দেয়।’

গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের ভোলাগাড়ী গ্রামে গেলে সাংবাদিকদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন এ দিনমজুর বাবা। 

আরও পড়ুন: কোটাবিরোধী সহিংসতায় নিহত ইমতিয়াজের লাশ যাচ্ছে যশোরে

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার ছেলে মো. রাসেল (১৫) নিহত হয়েছে। এরপর থেকেই ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন শোকে কাতর বাবা পিন্টু রহমান ও মা অঞ্জনা খাতুন। রাসেলের এমন মৃত্যুতে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও শোকাহত।

পিন্টু রহমান বলেন, ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে মুঠোফোনে কথা হয়েছিল। ওই দিন মা ও বোনের খোঁজখবর নিয়েছে সে। এরপর হঠাৎ রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছেলের নম্বর থেকে এক ব্যক্তি কল করে জানায় রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এরপর ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও কারফিউয়ের কারণে আর যেতে পারিনি। 

পিন্টু রহমান ও অঞ্জনা খাতুন দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। তাদের পরিবারে চার ভাই-বোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। এদের মধ্যে এক বোন মানসিক প্রতিবন্ধী। বাঁশ-খড়ের বেড়া আর টিনের ছাউনির ছোট্ট একটি ঘরে তাদের বসবাস। সংসারে অভাব অনটনের কারণে প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরোতেই পড়াশোনা থেমে যায় রাসেলের। দেড় বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে ৬-৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে আসছিল সে। গত কোরবানি ঈদের ছুটিতে বাসায় এসে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে আবারও নারায়ণগঞ্জে ফিরে যায় রাসেল।

আরও পড়ুন: বরিশালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাসহ কর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি রোডের দেওভোগ মার্কেটের ২ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয় কিশোর রাসেল। এরপর আহত রাসেলকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। ২১ জুলাই তার বুকে অস্ত্রোপচার করে একটি গুলি অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। এর এক দিন পর ২২ জুলাই ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাসেলের মৃত্যু হয়। ২৩ জুলাই দুপুরে রাসেলের মরদেহ পৌঁছায় নওগাঁয়। ওই দিনই গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। 

প্রতিনিধি/ এমইউ