images

সারাদেশ

গারো পাহাড়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ, হুমকিতে বন্যপ্রাণী

জেলা প্রতিনিধি

০৫ জুন ২০২৪, ১০:২৪ পিএম

নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেরপুরের গারো পাহাড়ে দেদারসে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে এসব সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়েছে বন্যপ্রাণী। একসময় যেখানে বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ ছিল, সেখানে দখলবাজরা ঘর-বাড়ি নির্মাণের পর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। এখন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য করার দাবি পরিবেশবাদীদের। আর বন বিভাগ চাইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।   

শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। বন বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ১৯ হাজার ২৭৫ একর বনভূমির মধ্যে দুই হাজার ৩৭ একর বনভূমি বেদখল হয়ে আছে।

আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে বিপন্ন প্রজাতির ‘বেঙ্গল স্লো লরিস’ অবমুক্ত

গারো পাহাড় ঘুরে জানা যায়, একটা সময় পাহাড়জুড়ে দেখা যেত উঁচু-নিচু টিলা। সে সময় বনে ছিল নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তবে, নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বনভূমিতে দখলদারদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় ঝলমলে আলোয় বন্যপ্রাণীরা নিজেদের বন ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। ফলে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য হারিয়ে বন পরিণত হয়েছে উপ-শহরে।

ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের ছোট গজনীর বাসিন্দা মিস্টি মারাক। তিনি বলেন, আমরা ছোট বেলায় পাহাড়ে বাঘডাশ, বানর, হরিণ, বন্য শূকর, কাঠবিড়ালি, বনমোরগ, বিভিন্ন ধরনের সাপ, টিয়া, ঘুঘু, ময়না, তোতা, বউ পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির বকসহ নানান পশু-পাখি দেখতাম। কিন্তু এখন আর পাহাড়ের রূপ আগের মতো নেই। পাহাড় ন্যাড়া হয়ে গেছে, একের পর এক বাড়ি-ঘর উঠেছে আর তাতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগে সবকিছু আলোকিত হয়ে গেছে। এতে করে গহীন বন বলতে এখন আর কিছু নেই, তাই বন্যপ্রাণীরাও অন্যত্র চলে গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ১০ জন ঢাকা মেইলকে জানান, বন বিভাগের এসব জমিতে দলিল-দস্তাবেজ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও; অতিরিক্ত টাকা দিলেই হরহামেশাই বনে মিলে বিদ্যুৎ সংযোগ। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিলেই এক থেকে দু’দিনের মধ্যেই বাড়িতে মিলে বিদ্যুৎ। এটা এখন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। 

অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য করার দাবি জানিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, বনের জমিতে বাড়ি-ঘর করা অবৈধ। সেখানে জমির কাগজপত্র না দেখে কীভাবে বন দখলকারীদের প্রত্যেকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে এসব সংযোগ দেওয়ার ফলে; পাহাড়ে এখন আগের রূপ নেই। বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল, মারাত্মক হুমকিতে আছে জীববৈচিত্র্য। এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা আশা করছি। 

আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বার্মিজ অজগর উদ্ধার 

বাংলাদেশ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের ট্রেইনার আদনান আযাদ বলেন, বিশ থেকে পঁচিশ বছর আগেও গারো পাহাড় ছিল ডিপ ফরেস্ট। কিন্তু ধীরে ধীরে বন দখল হওয়ায় আজ বনে বন্যপ্রাণীদের আবাস হুমকিতে পড়েছে। অনেক প্রাণী টিকে না থাকতে পেরে চলে গেছে। এটা আমাদের অপূরনীয় ক্ষতি। বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে হাতি মেরে ফেলা হচ্ছে। এর দায় বিদ্যুৎ বিভাগ এড়াতে পারে না।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, গারো পাহাড়ের বালিজুড়িতে যেখানে বন্যহাতি মারা হয়েছিল; সেখানে সরেজমিনে আমি গিয়েছিলাম। ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েই বেশির ভাগ হাতি মারা হয়। হাতি হত্যার দায়ে কারাভোগও করেছে অভিযুক্তরা। বনে বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে এখানে অনেক প্রাণী মারা যাচ্ছে। যার কারণে হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। 

সম্প্রতি এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি শেরপুরের জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী হোসেন বলেন, বন বিভাগ চাইলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। (সম্প্রতি তিনি বদলি হয়েছেন)

প্রতিনিধি/ এমইউ