নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৪ পিএম
বছরের শুরুতেই সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। গত তিন দিন ধরে কনকনে শীতে কাঁপছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি ঢাকাসহ দেশের বড় একটি অংশে। এদিন মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখেছে পঞ্চগড়। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের ১৩ জেলায় মৃদৃ শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামী আরও কয়েক দিন শীতের প্রকোপ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ এবং কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সারা দেশে কোথাও কোথাও দিনের বেলায় শীতের অনুভূতি হতে পারে।
মৃদু শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি। চলতি শীত মৌসুমে এটিই সর্বনিম্ন।
ঘন কুয়াশায় দিনের তাপমাত্রা কমেছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এতে রাজধানীসহ সারাদেশেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। আর এ অবস্থা আরও চার দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের প্রায় সবখানেই তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। কোথাও কোথাও সন্ধ্যার পর বেড়েছে শীতের অনুভূতি। ছুটির দিন এমনিতেই রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কম থাকে। তীব্র শীত তা আরও কমিয়ে দিয়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আজ রাজধানীতে কেউ ঘরের বাইরে বের হয়নি। যদিও নিম্ন আয়ের মানুষদের বিপত্তি বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলেও বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানান, রাজধানীতে তিন দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে। আর হঠাৎ তাপমাত্রার এই পতনের কারণেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণেও তাপমাত্রা কমেছে বলে জানান তিনি।
এই আবহাওয়াবিদ জানান, আগামীকাল শনিবার (৪ জানুয়ারি) তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কুয়াশা পুরোপুরি কাটতে আগামী আরও তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। এতে শীতের কাঁপুনিও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
কাগজে-কলমে রাজধানীতে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের অনুভূতি অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শৈত্যপ্রবাহের মতোই শীত অনুভূত হচ্ছে। এটাকে বলা হয় ‘কোল্ড ডে কন্ডিশন’। অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নামলেও তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে। মূলত মধ্যরাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা, উত্তরের বাতাস, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকা এবং ঊর্ধ্বাকাশের জেট স্ট্রিমের দক্ষিণমুখী বিস্তার ও নিম্নমুখী বিচরণ এই ঠান্ডার অনুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে হাড়-কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। এটাই গত দুই দিন ধরে হচ্ছে।
আরেক আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, শৈত্যপ্রবাহ কমে আসবে কি না বলা যাচ্ছে না, তবে তাপমাত্রা একটু বাড়বে- এর ফলে কয়েক দিন শীতের অনুভূতি কম থাকবে।
আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এছাড়া আগামী তিন দিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
আবহাওয়ার জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
জেবি