এবারের শীতে চলমান শৈত্যপ্রবাহে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে রাজধানীবাসী। বিশেষ করে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। কনকনে শীতের কারণে ফুটপাতে থাকা মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, উঁচু ভবন ও ফ্লাইওভারের নিচে। এখন পর্যন্ত তাদের অনেকের ভাগ্যেই জোটেনি কম্বল বা শীতবস্ত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি শীত মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গত এক দশকেও ঢাকায় এমন হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হয়নি। ফলে এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা অনেকের। উত্তরের জেলাগুলোর মতোই ঢাকাতেই একই শীত অনুভূতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনের সড়কে কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছিলেন সাহেদুল। তার সঙ্গে আরও দুজন আগুন পোহাচ্ছিলেন। কথা হচ্ছিল সাহেদুলের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘সকাল থাইক্যা রিক্সা চালাইছি। এহন আর শরীর না। ঠান্ডায় বরফ হইয়া গ্যাছে গা। হেই কারণে আগুনে তাপ নিতাছি।’
শুধু সাহেদুল নয়, ফুটপাতে যেসব ছিন্নমূল লোকজন থাকেন তারাও বিপাকে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছেন এবং শরীর গরম করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন।
মোহাম্মদপুর এলাকায় গত এক যুগ ধরে রিকশা চালান জাহেনুর ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। তিনি বলছিলেন, ঢাকায় এমন শীত কখনোই পাই নাই। আমাদের কুড়িগ্রামে এমন শীত হয়। কিন্তু ঢাকায় এবার যা হচ্ছে তাতে টেকাই কঠিন। তবুও গাড়ি নিয়া বের হইছি। কারণ, পেট তো চালাইতে হবে।
জাহেনুরের মতো শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন শত শত রিকশাচালককে দেখা গেছে। যদিও প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না। কিন্তু তাদের বের হতে হয়েছে জীবিকার তাগিদে।
রিকশাচালকরা জানিয়েছেন, এবার ঢাকায় তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। শীতের কারণে গ্রামেও তারা যেতে পারছেন না, আবার ঢাকাতেই খুব ভালোভাবে দিন কাটাতে পারছেন না। ঠান্ডায় ভাড়া বাড়েনি কিন্তু ঠিকই শীতের তীব্রতায় কষ্ট বেড়েছে।
রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা, কাকরাইল, বেইলি রোড, ফার্মগেট, শাহবাগ, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা এলাকার বিভিন্ন সড়কে দিনেরাতে সবসময় শুয়ে-বসে থাকতেন ছিন্নমূল মানুষ। কিন্তু আজ শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর ফুটপাতগুলোতে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই সরকারি স্থাপনা ও ফ্লাইওভারে নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। শীতের কনকনে ঠান্ডা থেকে রক্ষায় তারা চট, রাস্তায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক ও পুরনো ময়লা কাপড় দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
ফুটপাতে থাকা কয়েকজন জানালেন, গতবার শীতে তারা কম্বল ও শীতবস্ত্র পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কেউ বা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শীতবস্ত্র দেয়নি।
এদিকে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা জানানো হয়েছে।
এমআইকে/এমএইচটি