বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের শেষ সভা নিয়ে যেন তৈরি হলো এক নাটকীয় দৃশ্যপট। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও, হঠাৎ করেই সময় পিছিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় নেওয়া হয়। কিছুটা আনুষ্ঠানিক আলোচনা আর বিদায়বেলায় হাততালির আশা থাকলেও, সেই সভা গড়ায় প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত।
তবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল সভা শেষে। জানা গেল, যে মূল উদ্দেশ্যে এই সভা বিসিবি নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকার খসড়া অনুমোদন সেটাই হয়নি! সব আয়োজন, সময় পরিবর্তন, দীর্ঘ বৈঠক সব শেষে মূল কাজটাই অসমাপ্ত। বিসিবির এমন সিদ্ধান্তহীনতায় প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সামনে আরও নাটক বাকি?
বিজ্ঞাপন
এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের ঘরজুড়ে চাপা উত্তেজনা। প্রশ্নোত্তরের মাঝেই সংবাদকর্মীদের কণ্ঠে ক্ষোভ, চোখে আগুন। প্রশ্নোত্তর পর্বের নানা পথ পেরিয়ে এক পর্যায়ে একজন সংবাদকর্মী বলেন, ‘আন্দোলনে এত মানুষ প্রাণ দিয়েছে কোনো স্বৈরাচার তৈরির জন্য নয়। আপনারা যেন একনায়ক না বানান একজন প্রেসিডেন্টকে!’
আরও পড়ুন-এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলতে বাংলাদেশের সামনে যে সহজ সমীকরণ
আরও পড়ুন-ভারতকে হারাতে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ওপেনিংয়ে চান ইমরান খান
প্রশ্নের তীর ছুটেছে বর্তমান বিসিবি সভাপতি বুলবুলের দিকে! অভিযোগ উঠেছে, বুলবুল নিজের সর্বময় ক্ষমতা ব্যবহার করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কাউন্সিলরদের নাম জমা দেওয়ার সময় বাড়িয়েছেন, তাও আবার দ্বিতীয় দফায়! বোর্ডের আর কাউকে না জানিয়েই।
বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির মুখপাত্র হিসেবে সামনে থেকে কথা বলেন ইফতেখার রহমান। মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যানও তিনি। এবার তাঁর মুখেই স্বীকারোক্তি
এই বক্তব্যে বিস্ফোরণ ঘটে সংবাদ সম্মেলনে। কারণ, এত বড় সিদ্ধান্তের পেছনে নেই বোর্ড সভার ছায়াও। তড়িঘড়ি করে পাঠানো সেই চিঠিতে বিসিবির প্রধান নির্বাহীর স্বাক্ষর তো দূর, সোজা প্রেসিডেন্ট নিজেই সই করে পাঠিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর!
সংবাদকর্মীর প্রশ্ন থাকে,‘এত কম সময় ছিল যে, সিইও’র সই নেয়ারও সময় হয়নি?’ এমন প্রশ্নের জবাবে মিঠুর ভাষ্য, বোর্ড পরিচালকদের কাছে বোর্ড সভাপতি বলেছেন, সময় কম থাকায় তিনি একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মিঠু বলেন, ‘উনার ব্যাখ্যা ছিল, যেহেতু সময় স্বল্পতা ছিল… এটা উনার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা, যেটি আমি কেবল আপনাদের জানাচ্ছি, সময়ের কমতির কারণে আমাদের প্রতিক্রিয়ার আগেই তিনি এটা দিয়ে দিয়েছেন (অনুমোদন)। যেহেতু উনার ক্ষমতা আছে, উনি করে দিয়েছেন। তবে উনার কথা ছিল সময়ের স্বল্পতার কারণে সভা করতে পারেননি।’
আরও পড়ুন-বিসিবি কত টাকার মালিক জানালেন পরিচালক, পাওনা আরও ৪০ কোটি
গতকাল সন্ধ্যা ৬টার ছিল নাম জমার সময়সীমা। কিন্তু নাম জমা পড়ে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের নামও জমা পড়ে সেই সময়েই। অথচ নতুন করে সময় বাড়ানো হয়নি, এই দাবি মুখপাত্রের।
‘বাড়ানো যেত… কিন্তু বাড়ানো হয়নি। খুব স্পষ্ট করে বলছি—সময় বাড়ানো হয়নি।’
তবে রাত ৯টা পর্যন্ত নাম নিলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মিঠু বললেন, সময় পেরিয়ে আসা নামের পাশে শুধু নোট লিখে রেখেছেন, আর সেসব পাঠিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। এখন বৈধ না অবৈধ, সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

এতসব নাটকীয়তার পরও প্রকাশ হয়নি খসড়া ভোটার তালিকা। নির্বাচনের প্রথম ধাপেই তফসিল অমান্য! এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠে, এসব কি নির্বাচনী ষড়যন্ত্র নয়? পর্দার আড়ালে কি চলছে কিছু?
ইফতেখার একে সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সময় সংক্রান্ত সমস্যার জন্য দেরি।’
আরও পড়ুন- ‘বিসিবি সভাপতি পদে তামিম নয় আমি বুলবুল ভাইয়ের পক্ষেই’
কিন্তু সন্দেহ ঘনীভূত হলো যখন একাধিক সাবেক পরিচালক, সংগঠক ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল অভিযোগ করলেন, সরকার এবং ক্রীড়া উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চলছে নির্বাচনে। আর আমিনুল? তিনি তো নিজেই বলেছেন, উপদেষ্টা চাইলে তিনি আবারও নির্বাচন করবেন।
যখন সরাসরি ইফতেখারকে প্রশ্ন করা হলো— আপনি কি সরকারের হস্তক্ষেপ দেখছেন? তখনও উত্তর এল না, বরং এল পাশ কাটিয়ে যাওয়া মন্তব্য। ‘আমি আমার ক্লাবেরটা বলতে পারব। জেলা থেকে যারা এসেছে, তাদের জিজ্ঞেস করুন।’
যাঁকে ঘিরে এতসব বিতর্ক, বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, তিনি পুরো সময়টা নীরব। গণমাধ্যমের সামনে আসছেন না, প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন না।
অন্যদিকে, মুখপাত্র ইফতেখার সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বারবার বললেন, ‘আমি সব উত্তর জানি না, দিতে চাইও না। সবাই দোষে-গুণে মানুষ। কাজের ফল উনিই ভোগ করবেন।’

