ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলছে যুদ্ধ। রাজনৈতিক বৈরিভাবাপন্ন প্রতিবেশি দেশ দুইটির মাঝে চলছে টানাপোড়েন। দুই দেশই কয়েক প্রস্থ করে হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধাবস্থার প্রভাব পড়েছে অন্য ক্ষেত্রেও। ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের বিপক্ষে আর খেলবে না এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। প্রতিবেশি দেশ দুইটির যুদ্ধ চলছে বলেই এবারের এশিয়া কাপ ক্রিকেট আর আয়োজিত হবে না বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এরই মাঝে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে। আর তা হয়েছে এশিয়ান বিচ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে।
ওমানের মাস্কাটে চলমান ১০ম এশিয়ান বিচ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে শুক্রবার মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেও ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় যথারীতি। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধের মাঝেই খেলার মাঠে নেমে আবার হারের স্বাদও নিতে হয়েছে ভারতকে। ম্যাচটি ভারত হেরেছে ২-০ ব্যবধানে। প্রথম সেটে ৩৪–৬ আর দ্বিতীয় সেটে ৩৬–৭ ব্যবধানে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন-আইপিএল নিয়ে নতুন যে সিদ্ধান্ত নিল ভারত
ম্যাচ চলাকালীন ভারতীয় খেলোয়াড়রা কালো বাহুবন্ধনী (আর্মব্যান্ড) পরে মাঠে নামেন। একপ্রকার প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবেই। তবে আয়োজক ও এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন (এএইচএফ) বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি। আয়োজকদের পক্ষ থেকে ভারতীয় কোচিং স্টাফকে স্পষ্ট জানানো হয়, কালো বাহুবন্ধনী পরে খেলা চালিয়ে গেলে দলকে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন-ধর্মশালায় বোমার ভয়, আইপিএল চিয়ারলিডারের ভিডিও ভাইরাল
আরও পড়ুন- ‘পাকিস্তান যুদ্ধ বেছে নিয়েছে’
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধাবস্থার কারণে আইপিএল-পিএসএলের মত টুর্নামেন্টগুলো স্থগিত করা হয়েছে। হ্যান্ডবলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ভারত বয়কটের সিদ্ধান্তই নিয়েছিল। শুরুতে ভারতীয় দল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছিল। কিন্তু তখন এএইচএফ তাদের জানায়, ম্যাচ বয়কট করলে গুনতে হবে ১০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা এবং হতে পারে দুই বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও।
ভারতের হ্যান্ডবল ফেডারেশনের নির্বাহী পরিচালক আনন্দেশ্বর পান্ডে বলেন, "আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচ বয়কট করলে আমাদের ১০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হতো। পাশাপাশি দুই বছরের জন্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিষেধাজ্ঞা আসার আশঙ্কাও ছিল। এএইচএফ সাফ জানিয়ে দেয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে না খেললে তা অলিম্পিক সনদের চেতনার পরিপন্থী হবে। আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না।"
আরও পড়ুন- ভারতের হামলার জেরে পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো পিএসএল
আরও পড়ুন- রিশাদদের পিএসএল না খেলার সিদ্ধান্ত, পাকিস্তান ছাড়তে চান দ্রুত
ম্যাচের আগে ভারতের হ্যান্ডবল ফেডারেশন আলাদা চিঠি পাঠিয়েছিল দেশটির ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনকে, জানতে চেয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা উচিত হবে কি না।
পান্ডে বলেন, "আমরা খেলার আগে পরামর্শ চেয়েছিলাম, কিন্তু তখন পর্যন্ত তারা কোনো জবাব দেয়নি। সরকারিভাবে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই যে ভারতীয় দল পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে পারবে না। যদি স্পষ্টভাবে কিছু বলা হতো, তাহলে আমরা দলকে টেনে নিতাম।"
ভারতের পুরুষ ও নারী দল, দু'টিই অনেক আগেই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য নাম নিবন্ধন করেছিল। মাস্কাটে তারা পৌঁছেছে ৫ মে। তখনকার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্ক এতটা উত্তপ্ত হবে, তা কেউই আন্দাজ করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আবারও পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে পারে ভারত, যদি দু’দল সেমিফাইনাল বা ফাইনালে পৌঁছে। এ ব্যাপারে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে হ্যান্ডবল ফেডারেশন।
পান্ডে বলেন, "যদি আমরা যথাসময়ে কোনো পরামর্শ না পাই, তাহলে সম্ভাব্য পরের পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করব বলেই দলকে জানানো হবে।" এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মে। একইসঙ্গে এটি ২০২৬ সালের বিচ হ্যান্ডবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবেও কাজ করছে।