কৃপণতা একটি মন্দ স্বভাব। রাসুলুল্লাহ (স.) কৃপণতাকে মারাত্মক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হে বনু সালামা! তোমাদের নেতা কে?’ আমরা বললাম, ‘জুদ্দ ইবনে কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি।’ তিনি বলেন, ‘কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কী হতে পারে?’ (আদাবুল মুফরাদ: ২৯৬)
কিছু মানুষ স্ত্রী-সন্তানের ব্যাপারেও কৃপণ হয়ে থাকে। স্ত্রীকে ঠিকমতো ভরণপোষণের খরচটাও দেয় না। এই অবস্থায় ইসলামি শরিয়ত স্ত্রীকে অনুমতি দেয় যে স্বামীর অজান্তে সে প্রয়োজনীয় টাকা গ্রহণ করতে পারবে।
বিজ্ঞাপন
তবে স্বামী যদি স্ত্রী ও সন্তানদের আবশ্যকীয় ভরণপোষণ করে থাকে, তাহলে স্বামীকে না জানিয়ে তার টাকা বা সম্পদ নেওয়া জায়েজ নয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হিন্দা বিনতে উতবা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আবু সুফিয়ান একজন কৃপণ ব্যক্তি। তিনি আমার এবং আমার সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচাদি প্রদান করেন না। তবে আমি তার অজ্ঞাতেই তার সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় খরচাদি গ্রহণ করে থাকি। এতে কি আমার কোনো দোষ (পাপ) হবে? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি তার সম্পদ থেকে তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হয়—এমন সঙ্গত পরিমাণ নিতে পারো। (সহিহ মুসলিম: ১৭১৪)
আরও পড়ুন: সন্তান আল্লাহর দেওয়া উপহার, একইসঙ্গে আমানতও
সহিহ বুখারির বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মুয়াবিয়া (রা.) এর মা হিন্দা (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বললেন, আবু সুফিয়ান একজন কৃপণ ব্যক্তি। এমতাবস্থায় আমি যদি তার মাল থেকে গোপনে কিছু গ্রহণ করি, তাতে কি আমার গুনাহ হবে? তিনি বললেন, তুমি তোমার ও সন্তানদের প্রয়োজনানুসারে যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারো।’ (সহিহ বুখারি: ২২১১)
স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটাই হলো একজন অন্যজনের পরিপূরক। দুঃখে-কষ্টে, অসুখ-বিসুখে ও নানা সমস্যায় সর্বাবস্থায় সমব্যথী ও সহযোগী হওয়া আদর্শ স্বামী-স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য। স্বামী কখনও স্ত্রীকে ভরণপোষণ না দিয়ে পারে না; সন্তানের যত্ন না নিয়ে পারে না। স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি দয়াবান হওয়া উত্তম স্বামীর বৈশিষ্ট্য ও নবীজির সুন্নত। হজরত আনাস ইবন মালিক (রা.) বলেন, ‘পরিবার পরিজনের প্রতি রাসুল (স.)-এর মতো দয়াবান কাউকে দেখিনি।’ (সহিহ ইবন হিব্বান: ৫৯৫০)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: স্বামী যেমন হওয়া উচিত
এরপরও সমাজে দেখা যায়, কিছু মানুষ স্বভাবগতভাবে কৃপণতার মতো মারাত্মক ব্যধিতে আক্রান্ত। যে ব্যধি সহজে নিরাময় হওয়ার নয়। তাই প্রিয়নবী (স.) ওসব কৃপণের সংসার করার ব্যাপারে সমাধান দিয়েছেন যে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু স্বামীকে না জানিয়ে বা গোপনে নেওয়া যাবে। কেননা মা-বাবার ওপর সন্তানের হক যেমন রয়েছে, তেমনি নিজের ওপর শরীরেরও হক রয়েছে।
প্রসিদ্ধ সাহাবি সালমান ফারসি (রা.) বলেন, إِنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَلِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فَأَعْطِ كُلَّ ذِىْ حَقٍّ حَقًّهُ. ‘তোমার উপর তোমার রবের হক রয়েছে, তোমার শরীরের হক রয়েছে এবং তোমার পরিবারের হক রয়েছে। অতএব প্রত্যেককে তার অধিকার দাও’। রাসুল (স.)-এর কাছে সালমান (রা.)-এর এই বক্তব্য পেশ করা হলে তিনি বলেন, ‘সালমান সত্য বলেছে’। (বুখারি: ১৮১, ১৮৪; রিয়াজুস সালেহিন: ১৪৯)
সুতরাং সন্তানের হক বা অধিকার পূরণে বাবার ভূমিকা না থাকলে মা’কে দায়িত্ব নিতে হয়। কোনোভাবেই সন্তানকে অভুক্ত রাখা যাবে না, নিজেকে অভুক্ত রাখা যাবে না। অতি প্রয়োজনগুলো অপূরণ রাখা যাবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে নবীজির সুন্নতের অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

