রোববার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

‘ইতেকাফ’ জাহান্নাম থেকে মুক্তির অনন্য আমল 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ইতেকাফ পবিত্র রমজানের বিশেষ ইবাদত। মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নত। দুনিয়াদারির ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া এবং বিনয় ও নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমর্পণ করা, বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করাই ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম: ১১৭১)

মদিনায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (স.) প্রতিবছরই ইতেকাফ পালন করেছেন। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতেকাফ ছাড়েননি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফে কাটান।’ (বুখারি: ১৯০৩)


বিজ্ঞাপন


ইতেকাফ স্বেচ্ছায় পালনীয় ইবাদত। বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইতেকাফ করানোর সুযোগ নেই শরিয়তে। টাকার বিনিময়ে ইতেকাফ করা ও করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এভাবে ইতেকাফ করানোর মাধ্যমে মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হয় না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৫৯৫, ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/১৭১)

ইতেকাফের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করবেন; যার দূরত্ব দুই দিগন্তের দূরত্বের থেকে বেশি দূরত্ব হবে।’ (কানজুল উম্মাল: ২৪০১৯)

আরও পড়ুন
ইতেকাফ কী? গুরুত্ব ও ফজিলত
শবে কদরের এত মর্যাদা কেন, ফজিলত কী?
শবে কদরের দোয়া

এছাড়াও রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে জামাত প্রতিষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে ইতেকাফে থাকবে, নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া কোনো কথা বলবে না, তার জন্য বেহেশতে মহল তৈরি করা আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যাবে।’ (কাশফুল গুম্মাহ: ১/২১২)।


বিজ্ঞাপন


ইতেকাফ রমজানের শেষ দশকের আমল। ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য শবেকদর তালাশ করা। রাসুল (স.) বলেছেন, আমি প্রথম দশকে ইতেকাফ করেছি এই (কদর) রজনী খোঁজ করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর ইতেকাফ করেছি মাঝের দশকে, অতঃপর মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম, তারপর আমাকে বলা হলো, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ইতেকাফ করতে চায় সে যেন ইতেকাফ করে, অতঃপর লোকেরা তাঁর সঙ্গে ইতিকাফ করল। (মুসলিম: ১১৬৭) 

হাদিস শরিফে এ দশককে ‘ইতক্বুম মিনান নার’ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলা হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (স.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি শরিফ: ১০৫৩)

ইতেকাফের কারণে কোনো কিছু না করলেও নেকি লাভ হয়। ‘ইতেকাফকারী ব্যক্তি যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকে আর ইতেকাফে থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি বাইরের কোনো নেক কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও ওই নেক কাজগুলোর পূর্ণ নেকি সে লাভ করবে’ (ইবনে মাজা)। নবীজি (স.) বলেন, ‘ইতেকাফকারী মূলত গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং তাকে ইতেকাফের বিনিময়ে এত বেশি নেকি দেওয়া হবে, যেন সে সব নেকি অর্জনকারী’ (ইবনে মাজা)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশক ইতেকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক ইতেকাফকারীকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন