রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অমুসলিমের তৈরি ইফতার খাওয়া কি জায়েজ?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

অমুসলিমের তৈরি ইফতার খাওয়া কি জায়েজ?

ইফতার আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত। শরিয়তের পরিভাষায় রোজা পালনকারী সারাদিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর কোনো কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলে। ইফতার করা সুন্নত। রমজানে ইফতার করা যেমন পবিত্র আমল, তেমনি ইফতারের সময়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি দোয়া কবুলের বিশেষ সময়।  

নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে ও নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)। তিনি আরও বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদের ন্যূনতম একটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫৩)


বিজ্ঞাপন


প্রশ্ন হলো— কোনো অমুসলিম ইফতার তৈরি করলে, সেই ইফতার মুসলমাদের জন্য খাওয়া জায়েজ আছে? এর উত্তর হলো—তাদের তৈরি ইফতারে নাপাকি বা হারাম জিনিস থাকার প্রবল ধারণা না হলে তা খাওয়া জায়েজ আছে। যদিও সতর্কতার খাতিরে একজন রোজাদারের জন্য তা অনুত্তম। 

তবে, অমুসলিমের হাতে জবাইকৃত কোনো প্রাণির গোশত খাওয়া হালাল নয়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন—وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ ‘আর তোমরা ওই প্রাণি থেকে খেয়ো না যার ওপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি।’ (সুরা আনআম: ১২১; রদ্দুল মুহতার ১০/৫২১; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৪)

অতএব, অপবিত্র ও হারাম জিনিসের মিশ্রণ না থাকলে অমুসলিমদের তৈরি ইফতার বা যেকোনো খাবার গ্রহণ জায়েজ। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) অমুসলিমদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং তাদের রান্নাকৃত খাবারও খেয়েছেন। তাদের দেওয়া উপহারও গ্রহণ করেছেন। (বুখারি: ২৬১৫)

আবু হুমাইদ আল-সাঈদি (রা.) বলেন, ‘আমি নবী (স.)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধ করেছি। আয়লা-র বাদশাহ নবী (স.)-কে সাদা রঙের একটি খচ্চর এবং একটি চাদর উপহার দিয়েছেন’ (বুখারি: ২৯৯০)। আল-আব্বাস বিন আবদুল মোত্তালিব হুনাইনের দিন সম্পর্কে বলেন, ‘রাসুল (স.) সাদা রঙের একটি খচ্চরের উপর ছিলেন; যে খচ্চরটি ফারওয়া বিন নুফাছা আল-জুযামি তাকে উপহার দিয়েছিলেন।’ (মুসলিম: ১৭৭৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন:
প্রতিদিন ২টি পরিপূর্ণ রোজার সওয়াব লাভ করবেন যেভাবে
ভোররাতে মসজিদের মাইকে ডাকাডাকি, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
আজওয়া খেজুরে লেগে আছে নবীজির হাতের ছোঁয়া

আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (স.)-কে দুমাত-এর (একটি স্থান) উকাইদির (রাজা) একটি রেশমী কাপড় উপহার দিয়েছেন। তখন তিনি সেটা আলী (রা.)-কে দিয়ে বললেন: ‘এটাকে কেটে খিমার (নারীর অবগুণ্ঠন) বানিয়ে ফাতেমাদের দাও’ (বুখারি: ২৪৭২; মুসলিম: ২০৭১)। ইমাম শারফ আন-নববী বলেন, ‘এ হাদিসে কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ বৈধ হওয়ার পক্ষে দলিল রয়েছে।’ (শারহু মুসলিম: ১৪/৫০)

আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ইহুদি নারী (সা.)-এর কাছে একটি বিষযুক্ত ভেড়া নিয়ে আসে। তিনি সে ভেড়া থেকে খেয়েছেন। (বুখারি: ২৪৭৪; মুসলিম: ২১৯০)

সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে এসেছে, ‘অমুসলিমেরা সাধারণ উপলক্ষগুলোতে যেমন- নতুন শিশুর জন্ম ও অন্যান্য উপলক্ষে মুসলিমদের যেসব মিষ্টান্ন দেয়, সেগুলো খাওয়া জায়েজ; তবে ধর্মীয় উপলক্ষকেন্দ্রিক কোনো খাবার খাওয়া জায়েজ নয়। নবী (স.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, ‘তিনি মুশরিকদের দেওয়া উপহার গ্রহণ করেছেন।’ শাইখ আবদুল আজিজ ইবনে বাজ, শাইখ আবদুল আজিজ আলে শাইখ, শাইখ বকর আবু যায়েদ। (ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা, আল-মাজমুআ আস-সানিয়া: ১০/৪৭০)

শাইখ বিন উছাইমিন (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, আমার একজন অমুসলিম প্রতিবেশী আছে। কখনও কখনও বিভিন্ন উপলক্ষে সে আমাকে খাবার ও মিষ্টান্ন পাঠায়। এ খাবার আমি খাওয়া ও আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানো কি জায়েজ হবে? 

জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। যদি আপনি নিরাপদ মনে করেন, তাহলে কাফেরের দেওয়া হাদিয়া খাওয়া আপনার জন্য জায়েজ। কেননা নবী (স.)-কে যে ইহুদি নারী ভেড়া হাদিয়া দিয়েছে এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। যে ইহুদি তাকে তার ঘরে দাওয়াত করেছে, তিনি তার দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং তার খাবার খেয়েছেন। তাই কাফেরদের উপহার ও তাদের বাসায় খেতে কোনো আপত্তি নেই। 

কিন্তু শর্ত হচ্ছে- নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। যদি কোনো আশংকা থাকে, তাহলে তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে না। অনুরূপভাবে আরেকটি শর্ত হচ্ছে, খাবার ও উপহারগুলো তাদের ধর্মীয় উপলক্ষ কেন্দ্রিক না হওয়া (যেমন- পূজা ও বড়দিন পালন ইত্যাদি ধরনের কোনো উপলক্ষ)। এই ধরনের অবস্থায় উপলক্ষকেন্দ্রিক তাদের উপহার গ্রহণ জায়েজ নেই। (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব: ২৪/২)

অমুসলিমদের তাদের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলে ঈমান-আমলের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকলে অংশগ্রহণ করা জায়েজ হবে না। (আহকামুজ জিম্মাহ: ১/৭২৩) 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজার সকল হুকুম আহকাম জানার ও মানার তাওফিক দান করুন। নবীজির সুন্নতের ওপর অটল অবিচল থেকে জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর