প্রতিবছর রমজান মাসে ২৯ বা ৩০টি রোজা রাখার সুযোগ রয়েছে। কেউ চাইলেও রমজান মাসকে ৩০ দিনের ওপরে নিয়ে যেতে পারবেন না। সুতরাং প্রত্যেকে প্রতিদিন একটি রোজার সওয়াব লাভ করতে পারবেন। কিন্তু প্রিয়নবী (স.) এমন একটি আমলের কথা বলেছেন, যে আমলের কারণে একদিনে দুইটি পরিপূর্ণ রোজার সওয়াব লাভ করতে পারেন রোজাদার।
সেই আমলটি হলো—রোজাদারকে ইফতার করানো। এটি এমন আমল যে আমলের সওয়াব সম্পূর্ণ রোজার মতোই। অর্থাৎ কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে আপনার রোজার সওয়াব তো পাবেনই, এরসঙ্গে যোগ হবে আরেকটি স্বতন্ত্র রোজার সওয়াব।
বিজ্ঞাপন
জায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭; ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬; ইবনে হিব্বান: ৮/২১৬; সহিহ আল-জামে: ৬৪১৫)
আরও পড়ুন: ইফতারের সময় করণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
‘কাউকে ইফতার করানোর উদ্দেশ্য হতে হবে, পেট ভরে তৃপ্ত করানো’ (শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, আল ইখতিয়ারাত: পৃষ্ঠা-১৯)
মানুষকে ইফতার করানোকে সলফে সালেহিন মহান ইবাদত মনে করতেন। এমনকি নিজের ইফতার অন্যকে খাওয়াতেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- ইবনে ওমর, দাউদ আল-তাঈ, মালিক বিন দিনার, আহমদ ইবনে হাম্বল, ইবনুল মুবারক (রহ.)-সহ অনেকে।
আবু সাওয়ার আল-আদাওয়ি বলেন, বনি আদি গোত্রের লোকেরা এই মসজিদে নামাজ পড়ত। তাদের কেউ কখনো একাকি ইফতার করেনি। যদি ইফতার করার জন্য কাউকে পাওয়া যেত, তাকে নিয়ে ইফতার করত। আর যদি কাউকে না পেত, তাহলে নিজের খাবার মসজিদে এনে মানুষের সঙ্গে খেত এবং মানুষকেও খেতে দিত। (আব্দুল্লাহ আস-সালেহ-১৫পৃ.)
আরও পড়ুন: মানুষের সম্মান রক্ষার ফজিলত
রমজান ছাড়াও মানুষকে খাওয়ানো একটি বড় আমল। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ঙ্কর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উৎফুল্লতা।’ (সুরা দাহর: ৮-১১)
রমজানে যখন কেউ কাউকে ইফতার করায়, সেটির সওয়াব ও মর্যাদা বেড়ে যায়। এছাড়াও ইফতারে দাওয়াত ও আতিথেয়তায় হৃদ্যতা ও ভালোবাসা বাড়ে। একইসঙ্গে উত্তম লোকের সাহচর্য অর্জিত হয়। আর মুমিনদের মধ্যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। নবী (স.) বলেছেন—‘তোমরা ঈমান আনা ছাড়া জান্নাত প্রবেশ করতে পারবে না। আর পারস্পারিক ভালোবাসা ছাড়া তোমাদের ঈমান হবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব রোজাদারদের একে অপরকে ইফতার করানোর মাধ্যমে বিপুল নেকি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।