শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যে সাহাবির তেলাওয়াত শুনতে ফেরেশতারা ভিড় করতেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

যে সাহাবির তেলাওয়াত শুনতে ফেরেশতারা ভিড় করতেন

উসাইদ ইবনে হুজাইর (রা.) ছিলেন বিশিষ্ট আনসারি সাহাবি। ইসলামপূর্ব যুগে মদিনার চির বৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে তার সবগুলোর নেতৃত্ব দেন তিনি। উসাইদ (রা.) আউস গোত্রের প্রধান ঘোড় সওয়ার ছিলেন এবং তাঁর নিজস্ব একটি মজবুত দুর্গও ছিল। (উসুদুল গাবা: ১/৯২)

তিনি বাইআতে আকাবায় অংশগ্রহণকারী এবং রাসুল (স.)-এর মনোনীত ১২ নকিবের একজন। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে তাঁর বনু আবদুল আশহাল গোত্রের নকিব নিযুক্ত করেন। (উসুদুল গাবাহ: ১/১১১-১১২; আল-ইসতিআব: ১/৯৩)

উসাইদ ইবনে হুজাইর (রা.) মদিনায় রাসুল (স.)-এর প্রতিনিধি মুসআব ইবনে উমাইর (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তাঁরই কৌশলে সেদিন সাআদ ইবনে মুআজ (রা.)-ও ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উসাইদ ইবনে হুজাইর (রা.) সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন । তবে ইবনে ইসহাক ও ইবনে কালবি (রহ.)-এর মতে, বদর যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেননি। বায়তুল মোকাদ্দাস বিজয় অভিযানে ওমর (রা.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন কাব ইবনে মালিক, আবু সাইদ খুদরি (রা.), আনাস ইবনে মালিক (রা.) ও আয়েশা (রা.)।

আরও পড়ুন: ওমর (রা.) যেসব কারণে ইতিহাসে অনন্য

উসাইদ (রা.)-এর কণ্ঠস্বর ছিল সুমধুর। তাঁর কোরআন তেলাওয়াতে ছিল বিশেষ আকর্ষণ। ফেরেশতারা পর্যন্ত তাঁর তেলাওয়াত শোনার জন্য ভিড় জমাতেন। এক রাতে তিনি কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন, হঠাৎ অদূরে বেঁধে রাখা ঘোড়াটি লাফলাফি শুরু করল। এর কাছাকাছি ছিল তাঁর ছেলে ইয়াহইয়া। তিনি আশঙ্কা করলেন, ঘোড়াটা লাফিয়ে না জানি ইয়াহইয়ার গায়ে পড়ে। তাই তিনি তেলাওয়াত বন্ধ করে ইয়াহইয়াকে সরাতে গেলেন।

এমন সময় ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, মেঘখণ্ডের মতো কিছু, যাতে আছে অসংখ্য বাতি। সকালে এসে রাসুল (স.)-কে বিস্তারিত বলেন। তিনি ইরশাদ করলেন, ‘আরে উসাইদ! তুমি তেলাওয়াত করতে থাকতে। এটা তো ফেরেশতার ঝাঁক। তারা তোমার তেলাওয়াত শোনার জন্য আকাশ থেকে নেমে এসেছে। যদি তুমি সকাল পর্যন্ত তেলাওয়াত অব্যাহত রাখতে, তবে এই ফেরেশতারাও সকাল পর্যন্ত এভাবে অবস্থান করত আর সাধারণ মানুষরাও তাদের দেখতে পেত।’ (সহিহ মুসলিম: ১/২৬৯)

আরও পড়ুন: ১১ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন

উসাইদ (রা.)- দিব্য চোখে ‘সাকিনা’ (প্রশান্তির বাস্তব রূপ) প্রত্যক্ষ করেন। তিনি এমন এক ব্যক্তি যার চলার সময় আগে আগে একটি ‘নূর’ বা জ্যোতি চলতো। ইমাম বুখারি বর্ণনা করেছেন, এক অন্ধকার রাতে আববাদ ইবন বিশর ও উসাইদ ইবন হুজাইর রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নিকট থেকে বের হলেন। তাঁদের হাতে লাঠি থেকে জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয়ে তাদের চলার পথ আলোকিত করে তুলেছিল। তাঁরা যখন দুজন দুই দিকে চলে গেলেন, জ্যোতিও তাঁদের সাথে ভাগ হয়ে গেল। (শাজারাতুজ জাহাব: ১/৩১, হায়াতুস সাহাবা: ৩/৬১১)

হজরত উসাইদ ২০ হিজরি সনের শাবান মাসে ইন্তেকাল করেন। ওমর (রা.) তাঁর জানাজা পড়ান এবং তাঁর দেহ বহন করেন। জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। (উসদুল গাবাহ: ১/১১৩)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সাহাবিদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। সুন্দর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর