শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

ওমর (রা.) যেসব কারণে ইতিহাসে অনন্য

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২২, ০৭:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ওমর (রা.) যেসব কারণে ইতিহাসে অনন্য

হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। সত্যবাদিতা, বীরত্ব ও সাহসিকতায় অনন্য এবং তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বগুণে ইসলাম তখন অনেক দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। হজরত ওমর (রা.) জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবাদের একজন।

দ্বিনের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা, জ্ঞানের গভীরতা ও বিচক্ষণতায় তিনি ছিলেন এক অনন্য কালপুরুষ। তাই তো নবী (স.) তাঁর ব্যাপারে বলেছেন—


বিজ্ঞাপন


لَوْ كَانَ بَعْدِي نَبِيٌّ لَكَانَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ

‘আমার পরে কেউ নবী হলে ওমর ইবনুল খাত্তাব নবী হতেন।’ (মিশকাত: ৬০৩১)

তাঁর আরও কিছু এমন বৈশিষ্ট্য ছিল, যা তাকে অন্য সকল শাসক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও মর্যাদার শীর্ষে নিয়ে গেছে। হজরত ওমরের এমন ব্যতিক্রমী কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো।

১) হজরত ওমর (রা.)-কে দেখলে শয়তান পালিয়ে যেত। সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘হে ওমর! আল্লাহর শপথ! তোমাকে পথে দেখলে শয়তান পালিয়ে যায়’ (বুখারি ও মুসলিম)। তিরমিজি শরিফে হজরত আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনায়, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ওমরকে দেখে শয়তানকে পালিয়ে যেতে দেখেছি।’

২) আকাশের ফেরেশতারা ওমরকে (রা.) সম্মান করে। ইবনে আসাকির হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ওমররের অন্যতম মর্যাদা হলো—আকাশের সব ফেরেশতা তাকে সম্মান করে আর জমিনের সব শয়তান তাকে ভয় পায়’। মুসনাদে আহমদে হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেন, ‘হে ওমর! শয়তান তোমাকে ভয় পায়। আর ফেরেশতারা তোমাকে সম্মান করে।’


বিজ্ঞাপন


৩) ওমর (রা.)-কে নিয়ে আল্লাহ গর্ব করেন। ইমাম তাবারানি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আরাফার হাজিদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন। এটা হলো সাধারণ গর্ব। আর ওমরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে বিশেষ গর্ব করেন।’

৪) নবী হওয়ার যোগ্যতা। ‘আমার পরে কেউ নবী হলে উমর ইবনুল খাত্তাব নবী হতেন’ (মিশকাত: ৬০৩১)। উকবা বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমার পরে কেউ যদি নবী হতেন, সে সম্মান আল্লাহ ওমরকে দান করতেন। তার ভেতর নবীসুলভ যোগ্যতা ও দূরদৃষ্টি রয়েছে’ (তিরমিজি)।

৫) ওমরের সিদ্ধান্তের পক্ষে কোরআনের আয়াত নাজিল হত। বদরযুদ্ধের বন্দিদের সম্পর্কে তার মতামত অধিকতর সঠিক ছিল বলে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিজি ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘ওমরের সিদ্ধান্ত আর অন্য সাহাবীদের ভিন্ন সিদ্ধান্ত সামনে আসলে, ওমরের সিদ্ধান্তের পক্ষে আয়াত নাজিল হয়ে যেত।’ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রায় ১৫টি কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছে ওমর (রা.) সম্পর্কে। (ফাতহুল বারী ১/৫০৫)।

৬) ভেতরে-বাইরে নিরেট সত্যবাদী। তিরমিজি শরিফে ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ওমর এমন একজন মানুষ, যার ভেতরে আর বাইরে কোনো পার্থক্য নেই। সে মুখে যে সত্য উচ্চারণ করে, অন্তরেও সে সত্য লালন করে।’ অন্য হাদিসে এসেছে এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ওমরের জিহ্বায় সত্য রেখে দিয়েছেন। ফলে তিনি কেবল সত্যই উচ্চারণ করেন’ (আবুদাউদ: ১৮৩৪)। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সত্যকে ওমরের মুখে ও অন্তরে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। (তিরমিজি: ১৭৩৬)।

৭) জান্নাতিদের জন্য উজ্জল প্রদীপ ওমর। মুসনাদে বাজ্জারে ইমাম বাজ্জার (রহ.) ইবনে ওমর থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ওমর হলো জান্নাতীদের জন্য প্রদীপের মতো।

৮) ওমর (রা.) জীবিত থাকাবস্থায় ফেতনা মাথাচাড়া দেবে না বলে নবী (স.)-এর ভবিষ্যদ্বানী। উসমান ইবনে মাজউন (রা.) থেকে ইমাম বাজ্জার বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ওমরের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘যতদিন ওমর তোমাদের মাঝে থাকবে, ততদিন ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। ওমর যখন থাকবে না, তখন চতুর্দিক থেকে তোমাদের মাঝে ফেতনা দেখা যাবে।’

৯) ওমরের রাগ মুসলমানদের বিজয়ের কারণ। ইমাম তাবারানি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে তার আওসাতে বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জিব্রাইল এসে আমাকে জানিয়েছেন যে, স্বয়ং আল্লাহ ওমরকে সালাম জানিয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালা এটাও বলেছেন, ওমরের রাগ মুসলমানদের বিজয়ের কারণ।’

১০) জ্ঞানের গভীরতা। ওমরের (রা.) জ্ঞান সম্পর্কে মাজমাউয যাওয়ায়েদ গ্রন্থে হাইসামি বলেন, আবু ওয়ায়েল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,

قال عبد الله بن مسعود: لو أن علم عمر بن الخطاب وضع في كفة الميزان، ووضع علم الأرض في كفة لرجح علم عمر

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, “যদি ওমর ইবনুল খাত্তাব এর জ্ঞানকে এক পাল্লায় রাখা হয় এবং বিশ্ববাসীর জ্ঞানকে আরেক পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে ওমরের ইলম (জ্ঞান) ভারী হবে।”

তাঁর জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন, ‘পরবর্তী উম্মতের মধ্যে বহু মুহাদ্দিস তথা জ্ঞানী অতিবাহিত হয়েছেন। আমার উম্মতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দিস থাকেন, তিনি ওমর।’ (বুখারি: ৩৪৬৯)

আল্লাহ তাআলা এই দিগ্বিজয়ী মহাবীর মুসলিম জাতির গর্ব ক্ষণজন্ম মহাপুরুষ ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর