সন্তান আল্লাহ তাআলার বিশেষ নেয়ামত। তিনি কাউকে পুত্র সন্তান দান করেন, আবার কাউকে দেন মেয়ে। কাউকে ছেলে-মেয়ে উভয়ই দেন, কাউকে নিঃসন্তান রাখেন। এটি মহান রবের নিজস্ব ফায়সালা। তাঁর ফায়সালার বাইরে মানুষ কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-মেয়ে উভয়ই দান করেন। আবার যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা করেন।’ (সুরা আশ-শুরা: ৫০)
তবে অনেকেই পুত্র সন্তান কামনা করে থাকেন। এজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করার বিকল্প নেই। হজরত ইবরাহিম (আ.) একসময় নিঃসন্তান ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করলেন সৎ পুত্র সন্তানের জন্য।
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করলেন। তাকে নেক পুত্র সন্তান দান করলেন। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন— رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সলেহিন’ অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন।’ (সুরা সাফফাত: ১০০) পুত্র সন্তান লাভে ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়াটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয়।
হজরত জাকারিয়া (আ.) বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নিঃসন্তান ছিলেন। মরিয়ম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একদিন তিনি দেখলেন, আল্লাহ তাআলা মৌসুম ছাড়াই মরিয়ম (আ.)-কে ফল দান করেছেন। তখন তার মনে সন্তান লাভের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল। তিনি ভাবলেন যে, যে আল্লাহ বিনা-মৌসুমে ফল দিতে পারেন, সে আল্লাহ বৃদ্ধ দম্পতিকে সন্তান দান করতে পারেন। তাই তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, যে দোয়াটি সবাই করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ২০০ কোটি নেকি লাভের দোয়া
দোয়াটি হলো—رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুররিয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩৮)
উল্লেখ্য, হজরত ইয়াহিয়া (আ.)-ই হলেন জাকারিয়া (আ.)-এর সন্তান। পুত্র সন্তান লাভের জন্য এই দোয়াটিও করা যায়।
এছাড়াও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিঃসন্তান মাতা-পিতাকে এই দোয়াটি শিখিয়েছেন—رَبِّ لَا تَذَرْنِى فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْوَٰرِثِينَ ‘রব্বি লা-তাযারনি ফারদাঁও ওয়া আন্তা খাইরুল ওয়ারিছিন’ অর্থ: ‘হে আমার রব, আমাকে একা রেখো না। তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৯)। অতএব, নিঃসন্তান দম্পতিরা এই দোয়াটি করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ নেক সন্তান দান করবেন।
আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে শত্রুর মনে ভয় সৃষ্টি হয়
নিঃসন্তান দম্পতির উচিত, আল্লাহর ওপর ভরসা করে উল্লিখিত দোয়াগুলো পাঠ করা। মুমিনদের গুণ হলো— তারা আল্লাহ তাআলার কাছে যেকোনো বিষয়ে দোয়া করে থাকেন। আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের পরিচয় দিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, তারা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন—
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا ‘রব্বানা-হাবলানা-মিন্ আয্ওয়াজ্বিনা ওয়া যুররিয়্যা-তিনা-কুর্রতা আ’ইয়ুন, ওয়া জা’আল্না-লিল মুত্তাকিনা ইমামা। অর্থাৎ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর করো এবং আমাদের সংযমীদের আদর্শস্বরূপ করো।’ (সুরা ফোরকান: ৭৪)
সন্তান লাভের জন্য কোরআনে বর্ণিত উল্লেখিত সবকটি দোয়া করা যায়। আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সন্তান কামনা করা যাবে না। সন্তান লাভের জন্য অবৈধ ও অনৈসলামিক উপায়ও অবলম্বন করা যাবে না। নিঃসন্তান দম্পতির উচিত— আল্লাহর ওপর ভরসা করে উল্লিখিত দোয়াগুলোর ওপর আমল করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নিঃসন্তান দম্পতির মনের আশা পূরণ করুন। আমিন।

