সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

যেসব কারণে গোসল ফরজ হয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪১ এএম

শেয়ার করুন:

যেসব কারণে গোসল ফরজ হয়

পবিত্রতা দীনের ভিত্তি। ‘অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া নেক কাজের ভিত্তি, যা রুচিশীল ব্যক্তির রুচির দাবি। বিশেষত, যার মধ্যে ফেরেশতাসুলভ নূর প্রসার লাভ করেছে, তারা অপবিত্রতা অপছন্দ করে এবং পবিত্রতা পছন্দ করে। তাতে আনন্দ ও প্রশান্তি বোধ করে।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, পৃষ্ঠা-১৭৩)

নামাজসহ একাধিক ইবাদতের জন্য পবিত্রতার শর্তারোপ করেছে ইসলামি শরিয়ত। একাধিক আয়াত ও হাদিসে মুমিনদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে জীবন-যাপনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি নাপাক (জানাবাত) অবস্থায় থাকো, তবে নিজেদের দেহ (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা: ৬) 


বিজ্ঞাপন


আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ইসলাম পরিচ্ছন্ন। সুতরাং তোমরা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিই প্রবেশ করবে।’ (ফাইজুল কাদির: ৩০৬৫)

আরও পড়ুন: টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
তিন কারণে গোসল ফরজ হয়। সেগুলো হলো—

এক. জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হওয়া। কেউ ঘুম থেকে ওঠার পর যদি তার কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখে, তাহলে তার স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাতের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক, উত্তেজনা অনুভব হোক বা না-হোক সর্বাবস্থায় গোসল ফরজ হবে। (হেদায়া: ১/৪৫, আন নুতাফ ফিল ফতোয়া, পৃ-২৯)


বিজ্ঞাপন


দুই. স্ত্রী সহবাস করা। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। (বুখারি: ২৯১, মুসলিম: ৩৪৩)

আরও পড়ুন: সহবাসের দোয়া

তিন. নারীদের ঋতুস্রাব বা নেফাস (সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব) বন্ধ হওয়ার পরও গোসল ফরজ। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৬৫)

জেনে রাখা ভালো—গোসলের পদ্ধতি শুদ্ধ না হলে পবিত্রতা অর্জন হয় না। যার ফলে ইবাদত বন্দেগিও শুদ্ধ হয় না। তাই ফরজ গোসলে সতর্কতা জরুরি। গোসলের ফরজগুলো জেনে রাখুন।

গোসলের ফরজ
গোসলের ফরজ তিনটি। এ তিনটির কোনো একটি ছুটে গেলে ফরজ গোসল আদায় হবে না।
এক. কুলি করা। দুই. নাকে পানি দেওয়া। তিন. পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো। (হেদায়া: ১/২৯)

গোসলের সুন্নত
গোসলের সুন্নতগুলো হলো—এক. গোসলের নিয়ত করা। দুই. বিসমিল্লাহ পড়া। তিন. দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া। চার. মেসওয়াক করা। পাঁচ. প্রথমে অজু করা। ছয়. শরীরে কোনো নাপাকি লেগে থাকলে তা দূর করা। সাত. সারা দেহে তিনবার পানি ঢালা। আট. ফরজ কাজগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। (ফতোয়ায়ে কাজিখান: ১/৭৯, রদ্দুল মুহতার: ১/১৫৬)

আরও পড়ুন: ফরজ গোসলের পর নামাজের জন্য অজু করতে হবে কি?

ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
গোসলের আগে ইস্তিঞ্জা (প্রস্রাব-পায়খানা) সেরে নেওয়া। এরপর দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব জায়গায় বীর্য ও নাপাকি লেগে থাকে, তা ধুয়ে পরিষ্কার করা। এবার বাঁ হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলা। তারপর অজু করা, তবে পা ধৌত করবে না। অতঃপর পুরো শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে তিনবার ডানে, তারপর তিনবার বাঁয়ে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধুতে হবে, যেন শরীরের কোনো অংশ এমনকি কোনো লোমও শুকনো না থাকে। নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে। সব শেষে গোসলের জায়গা থেকে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুয়ে নেবে। (হেদায়া: ১/৩০)

গোসলের আদব
উঁচু স্থানে বসে গোসল করা, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে। পানির অপচয় না করা। বসে বসে গোসল করা।
লোক সমাগমের স্থানে গোসল না করা। পাক জায়গায় গোসল করা। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার: ১/৯৪)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যথাযথ নিয়মে পবিত্রতা অর্জনের তাওফিক দান করুন। সবসময় পবিত্র-পরিচ্ছন্ন থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর