প্রত্যেক নেক আমলই মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকল নেক কাজে অংশীদার হতে চান একজন মুমিন। বড়-ছোট কোনো নেক আমল থেকেই পূর্ববর্তী আলেমগণ ছিটকে পড়তে চাইতেন না। এমনকি প্রতিযোগিতা করতেন।
কারণ, কিছু আমল ইসলামে এমন পর্যায়ের, যেগুলো করার জন্য প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন বিশ্বনবী (স.)। আল্লাহ তাআলাও পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে—‘এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।’ (সুরা মুতাফফিফিন: ২৬)
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মুখনিসৃত এমন চারটি আমলের কথা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে, যেসব আমল প্রতিযোগিতা করে অর্জন করার মতো।
১) আজান দেওয়া
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, লোকেরা যদি জানত যে, আজান দেওয়া ও নামাজের প্রথম সারিতে দাঁড়ানোর কী মাহাত্ম্য আছে, অতঃপর (তাতে অংশগ্রহণের জন্য) যদি লটারি ছাড়া অন্য কোনো উপায় না পেত, তবে তারা অবশ্যই সে ক্ষেত্রে লটারির সাহায্য নিত। (সহিহ বুখারি: ৬১৫; সহিহ মুসলিম: ১০০৯)
ফজিলত: মানুষকে আল্লাহর ঘরের দিকে আহ্বান করা (আজান দেওয়া) অত্যন্ত সৌভাগ্যের কাজ। কারণ, কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। রাসুল (স.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনগণ লোকদের মাঝে সুদীর্ঘ ঘাড়বিশিষ্ট হবে। (ইবনে মাজাহ: ৭২৫)
বিজ্ঞাপন
২) আগে-ভাগে মসজিদে যাওয়া
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যদি মানুষ জানতে পারত, আজান এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের মধ্যে কী ফজিলত—আর তা লটারি ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব না হতো, তবে তার জন্য লোকেরা অবশ্যই লটারি করত। আর যদি জানতে পারত, মসজিদে আগে আসার মধ্যে কী ফজিলত, তাহলে তার জন্য প্রতিযোগিতা করে আসত।’ (সহিহ বুখারি: ৬১৫)
ফজিলত: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করে যতক্ষণ স্বস্থানে বসে থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য নিম্নরূপ দোয়া করতে থাকেন, (অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দিন, হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন), যতক্ষণ না তার অজু ভঙ্গ হয়’ (নাসায়ি: ৭৩৩)। বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় আছে, নামাজ পড়ে যতক্ষণ সে স্বস্থানে বসা থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন। হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, তার তওবা কবুল করুন। (তারা এসব দোয়া করতেই থাকে) যতক্ষণ পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং তার অজু নষ্ট না হয়’। (সহিহ বুখারি: ২১১৯; মুসলিম: ৬৪৯)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজের অপেক্ষায় থাকে, সে যেন নামাজের মধ্যেই থাকে। (নাসায়ি: ৭৩৪)
৩) জামাতে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যদি লোকেরা জানত যে, আজান ও প্রথম কাতারে সালাত আদায়ে কী নেকি আছে—তাহলে তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করত। অনুরূপভাবে যদি তারা জানত এশা ও ফজরের সালাতে কী নেকি রয়েছে, তবে তারা হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও ওই দুই সালাতে আসত।’ (বুখারি: ৬১৫)
ফজিলত: বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলতেন, ‘আল্লাহ প্রথম কাতারের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও প্রথম কাতারের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন’ (নাসায়ি: ৮১১)। ইরবাদ বিন সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) প্রথম কাতারের লোকের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং দ্বিতীয় কাতারের লোকের জন্য একবার। (ইবনে মাজাহ: ৯৯৬)
৪) ফজর ও এশার জামাতে শরিক হওয়া
এই দুই নামাজের সময় মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে জামাত দুটিতে অবহেলার অবকাশ বেশি। গাফিলতিও প্রকাশ পেয়ে থাকে এই নামাজগুলোতে। এজন্য এর প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম: ৬৫৬)
ফজিলত: আবদুর রহমান ইবনে আবু আমরাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন মাগরিবের নামাজের পর উসমান ইবনে আফফান মসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন, ভাতিজা, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল, সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল’। (মুসলিম: ১৩৭৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে উপরোক্ত আমলের ব্যাপারে বেশি সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।