বিশুদ্ধ ঈমান ও নেক আমল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের প্রধানতম শর্ত। তাই দুনিয়াতে ঈমানের পরিচর্যা, অধিক নেক আমল ও আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। এখানে ১৭টি নেক আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো, যার প্রত্যেকটি হাদিসের ভাষায় সর্বোত্তম আমল হিসেবে স্বীকৃত।
১) কোরআন শিক্ষা
উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫০২৭)
বিজ্ঞাপন
২) আহার করানো ৩) সালাম দেওয়া
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (স.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, ইসলামের কোন আমলটি উত্তম? তিনি বলেন, ‘আহার করানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি: ২৮)
আরও পড়ুন: নারী-পুরুষ একে অপরকে সালাম দেওয়া জায়েজ?
৪) পরিবারের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারের কাছে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৮৯৫)
৫) দীর্ঘ নামাজ
আবদুল্লাহ ইবনে হুবশি আল-খাসআমি (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (স.)-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা।..’ (আবু দাউদ: ১৪৪৯)
বিজ্ঞাপন
৬) মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ৭) যথাসময়ে নামাজ ৮) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি (সাহাবি) রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে নামাজ আদায় করা, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, অতঃপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ (বুখারি: ৭৫৩৪)
আরও পড়ুন: সহজ পাঁচ আমলে হজের সওয়াব
৯) সংশয়মুক্ত ঈমান ১০) পাপমুক্ত হজ
আবদুল্লাহ ইবনে হুবশি খাসআমি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো- সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বলেন, ‘সংশয়মুক্ত ঈমান, খেয়ানতবিহীন জিহাদ এবং পাপমুক্ত হজ।’ (নাসায়ি: ২৫২৬)
১১) উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ ১২) কোরবানি করা
আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং কোরবানির দিন কোরবানি করা।’ (ইবনে মাজাহ: ২৯২৪)
১৩) সার্বক্ষণিক জিকিরে থাকা
আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বলেন, একবার এক বেদুঈন রাসুল (স.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি (স.) বলেন, ‘সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে দীর্ঘ হায়াত পেয়েছে এবং যার আমল নেক হয়েছে।’ সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি (স.) বলেন, ‘তুমি যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে তখন তোমার মুখে আল্লাহর জিকিররত থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৭৬৯৯)
১৪) নামাজে বিনয়ী হওয়া
বিনয়ী শব্দের বিপরীত হলো অহংকার। অহংকার থেকে মুক্ত ইবাদতই আল্লাহ কবুল করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নামাজের মধ্যে নিজের কাঁধ নরম করে রাখে। অর্থাৎ অহংকারমুক্ত থাকে।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৬৭২)
আরও পড়ুন: গাড়িতে নামাজ পড়ার নিয়ম
১৫) চরিত্র সুন্দর করা
চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। এই অমূল্য সম্পদ অর্জনে সুন্দর চরিত্র গঠনের বিকল্প নেই। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) অশ্লীলভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।’ (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৯)
১৬) ফজরের দুই রাকাত সুন্নত
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকে উত্তম।’ (সহিহ মুসলিম: ৭২৫)
১৭) প্রথম ওয়াক্তে নামাজ
উম্মে ফারওয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে উত্তম আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ওয়াক্তের প্রথম ভাগে নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম আমল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত গুণগুলো অর্জন করার এবং ইখলাসের সঙ্গে নিয়মিত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

