রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

ইসলামে লটারির বিধান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলামে লটারির বিধান

যেসব কাজে কল্যাণ ও উপকার নিহিত রয়েছে সেগুলোকে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য হালাল করেছেন। আর যেসব কাজে অকল্যাণ, ক্ষতি এবং ধ্বংস নিহিত রয়েছে সেগুলোকে হারাম করেছেন। পবিত্র কোরআনে মদ, জুয়া, ভাগ্য নির্ধারক শরকে শয়তানের কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং ওসব কাজ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা মায়েদা: ৯০)

লটারি কী
লটারি অর্থ ভাগ্য পরীক্ষার খেলা। ইসলামে লটারি হচ্ছে জুয়ার একটি প্রকার। প্রত্যেক ওই লেনদেনকে জুয়া বলা হয়, যা লাভ ও লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত ও সন্দেহযুক্ত থাকে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ২/৩৩৬) অর্থাৎ ইসলামে এমন কাজ বা লেনদেনকে জুয়া বলে যা ক্ষেত্রবিশেষে পুরোটাই লাভ বা পুরোটাই লোকসানের বাজির ওপর থাকে।

আরও পড়ুন: সুদের ভয়ঙ্কর পরিণতি

সুতরাং লটারি খেলাও হারাম কাজের অন্তর্ভুক্ত। আর প্রত্যেক বাজি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। এমনকি শিশুদের হারজিতের খেলাও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ২/১১৬, সুরা মায়েদা: ৯০-৯৩)

তবে, কোম্পানির তরফ থেকে কিংবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে লটারির মাধ্যমে দেওয়া পুরস্কার হারাম নয়। এ প্রসঙ্গে ফিকহের কিতাবগুলোতে বলা হয়েছে— বৈধ পণ্য নিজ প্রয়োজনে ক্রয় করা হলে মালিকপক্ষ যদি লটারির মাধ্যমে পুরস্কার ঘোষণা করে, তা গ্রহণ করা শরিয়তপরিপন্থী নয়। পক্ষান্তরে পুরস্কার পাওয়ার আশায় পণ্য ক্রয় করা জুয়ার নামান্তর। এমতাবস্থায় ঘোষিত পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েজ নয়। (হেদায়া: ৩/৫৯, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০/১৬৭)


বিজ্ঞাপন


লটারির মাসয়ালা
লটারির মাসয়ালা হচ্ছে- তা হারাম। তাই লটারির টিকিট কেনা জায়েজ নেই। কেননা সেই ইনভেস্টমেন্টের টাকা পুরোটাই ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। আর প্রত্যেক ওই লেনদেনকে জুয়া বলা হয়, যা লাভ ও লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত ও সন্দেহযুক্ত থাকে। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ২/৩৩৬)

যদি মনে করা হয় যে, লটারির টাকা দিয়ে মানুষের উপকার হয়, তবুও জানতে হবে যে তাতে পাপ ও অকল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর যে কাজে পুণ্য ও পাপ দুটোই একইসঙ্গে থাকে তা বর্জন করাই জ্ঞানীর কাজ। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘লোক তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো উভয়ের মধ্যেই মহাপাপ ও মানুষের জন্য উপকারও আছে, কিন্তু ওদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।’ (সুরা বাকারা: ২১৯)

আরও পড়ুন: ১০ ব্যক্তির ওপর নবীজির অভিশাপ

তবে যদি কেউ নিজের প্রয়োজনে কোনোকিছু ক্রয় করে এবং এ কারণেই লটারির মাধ্যমে বিজিত হন, ওই পুরস্কার গ্রহণে শরিয়তে নিষেধাজ্ঞা নেই, যা আগেই বলা হয়েছে। অর্থাৎ লটারির উদ্দেশ্যে কোনো ইনভেস্ট নেই, কিন্তু কোম্পানি বা রাষ্ট্র প্রচারণার অংশ হিসেবে লটারির মাধ্যমে বিজিত ঘোষণার মাধ্যমে পুরস্কৃত করে, তা গ্রহণ করতে শরিয়তে নিষেধাজ্ঞা নেই। (হেদায়া: ৩/৫৯, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ১০/১৬৭)

যেমন- বর্তমানে বাজারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লাকি কুপন ছাড়া হয়। এটি মূলত মূল্যছাড়েরই একটি পদ্ধতি। কুপন ছাড়ার পর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে এবং ক্রেতাদেরকে কোনোরূপ ধোঁকা না দিলে, ক্রেতা যদি শুধু পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যেই পণ্য ক্রয় করে না থাকে, তাহলে ওই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকেও কেনা-বেচা করা এবং লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েজ। 

আরও পড়ুন: ব্যবসায় সফল হতে চাইলে নবীজির ৭ নির্দেশনা মানুন

যদিও পণ্যের অধিক প্রচারের জন্য এভাবে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা ইসলামে পছন্দনীয় নয়; বরং পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য পছন্দনীয় নিয়ম হলো- ব্যাপকভাবে মূল্যছাড় দেওয়া কিংবা আগের মূল্য বহাল রেখে পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। (বুহুস ফি কাজায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরাহ: ২/২৩২; ফতোয়ায়ে মুআছিরাহ: ২/৪২০)

উল্লেখ্য, জুয়ার অনেক নতুন-পুরনো ধরন আছে, যা হাতে গুণে উল্লেখ করা সত্যিই কঠিন। সময়ের পরিবর্তনে আরো যে কত ধরনের জুয়ার পথ আবিষ্কৃত হবে, তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সবরকম হারাম থেকে দূরে থাকার এবং জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুগত হয়ে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর