সালাম ইসলামে সর্বোত্তম ও একমাত্র অভিবাদন। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতা জাগ্রত করে সালাম। দূর করে মানব-মনের অহংকার, হিংসা বিদ্বেষ। ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় হয়। সালাম দেওয়া-নেওয়া নবী-রাসুলদের সুন্নত। উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ও পরিপূর্ণ এ অভিবাদনরীতি বলবত থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত।
জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। মুসলিমরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা বলবেন, ‘তোমাদের প্রতি সালাম’, তোমরা সুখী হও’ (সুরা জুমার: ৭৩)। এক জান্নাতি অপর জান্নাতিকে সালাম দেবে। ‘সেখানে তাদের অভিবাদন হবে সালাম’ (সুরা ইউনুস: ১০)। মহান আল্লাহ তাআলাও জান্নাতিদের সালাম দেবেন। ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা ইয়াসিন: ৫৮)
বিজ্ঞাপন
সালাম আরবি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, শুভকামনা। উম্মতকে সালামের প্রচার প্রসার করার জোর তাকিদ দিয়েছেন মহানবী (স.)। সালাম একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন একটা কথা বলব, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করো।’ (মুসলিম: ৫৪)
সালাম না দেয়া কৃপণতা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে সে সব চেয়ে বড় কৃপণ। যে ব্যক্তি দোয়া করার ব্যাপারে অক্ষম, সে সবচেয়ে অক্ষম।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ১০৪২)
ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে যেকোনো নারী-পুরুষ পরস্পর সালাম বিনিময় করতে পারে। আবু হাশেম থেকে বর্ণিত সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেছেন, জুমার দিন আমরা খুশি হতাম। (আবু হাশেম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? তিনি বললেন, আমাদের এখানে এক বৃদ্ধা ছিল। সেই বৃদ্ধা এক প্রকার সবজির শেকড় তুলে পাতিলে রাখত এবং যবের কয়েকটি দানা তাতে ঢেলে দিয়ে খাবার তৈরি করত। আমরা জুমার সালাত শেষ করে ওই বৃদ্ধার নিকট যেতাম এবং তাকে সালাম করতাম।’ (বুখারি: ২৩৪৯)
বিজ্ঞাপন
উম্মে হানী (রা.) বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের দিন নবী কারিম (স.)-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন এবং ফাতিমা (রা.) তাকে কাপড় দিয়ে পর্দা করছিলেন। অতঃপর আমি তাকে সালাম দিলাম (বুখারি, মুসলিম; মেশকাত: ৩৯৭৭)
আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একদল মহিলার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে সালাম করলেন (আবু দাউদ: ৫২০; তিরমিজি: ২৬৯৮, মেশকাত: ৪০০)
উপরোক্ত হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, মহিলা ও পুরুষ একে অপরকে সালাম দিতে পারে। তবে ফিতনার ভয় থাকলে সালাম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া অপ্রয়োজনেও গায়রে মাহরাম নারীদের সঙ্গে সালাম আদান প্রদান করা যাবে না। যেমন, পথে চলাচল করা অবস্থায় তাদেরকে সালাম দেওয়া যাবে না। তেমনি তারা সালাম দিলে তার উত্তর শুনিয়ে দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: ‘রিকশাওয়ালাকে সালাম দিন, বেশি সওয়াব পাবেন’
কোনো প্রয়োজনে কথা বলতে হলে পর্দা রক্ষা করে কথা বলবে এবং এক্ষেত্রে সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করাটাই উত্তম। এমনিভাবে মোবাইলে কথা বলার সময়ও সালাম আদান প্রদান করা যাবে। (তথ্যসূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৬৩০০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ১৯৪৪৯; মিরকাতুল মাফাতিহ: ৮/৪৬৮; ফাতহুল বারি: ১১/৩৪ পৃ.; আননাহরুল ফায়েক ১/২৭১; রদ্দুল মুখতার: ১/৬১৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফেতনা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। ইসলামি অভিবাদনরীতি বলবত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।