জান্নাত আরবি শব্দ। অর্থ বাগান বা উদ্যান। প্রচলিত অর্থে বেহেশত। ইসলামি পরিভাষায়, পার্থিব জীবনে যেসব মুসলিম আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলবে, পরকালের হিসাবে যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তাদের জন্য আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন জান্নাত। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা অনন্তকাল জান্নাতেই থাকবেন। জান্নাত চিরস্থায়ী ভোগ-বিলাসের স্থান। যেখানে মৃত্যু নেই, রোগ-বালাই নেই, বার্ধক্য নেই।
জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৩; বুখারি: ৩২৪৪)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি
জান্নাত কত বড়—সে সম্পর্কে কোরআনের একাধিক আয়াতে ও সহিহ হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে- যার প্রশস্ততা মহাকাশ ও এই পৃথিবীব্যাপী। আর জেনে রাখো, এ জান্নাত আমি প্রস্তুত রেখেছি মুত্তাকিদের জন্যে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩)
আয়াতে জান্নাতের বিশালতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এর বিস্তৃতি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সমান। এর চেয়ে বিস্তৃত কিছু মানুষ কল্পনা করতে পারে না, তাই জান্নাতের প্রশস্ততাকে মানুষের কল্পনাশক্তির সর্বোচ্চ উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাতের প্রশস্ততা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলব্যাপী বিস্তৃত। অর্থাৎ প্রশস্ততায় তা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে নিজের মধ্যে ধরে নিতে পারে। এর প্রশস্ততাই যখন এত বড়, তখন দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। অবশ্য কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, জান্নাত দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান। কেননা তা আরশের নিচে গম্বুজের মত। গম্বুজের মত গোলাকার বস্তুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান হয়ে থাকে। এ বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ হলো— রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে তখন ফেরদাউস চাইবে; কেননা তা সর্বোচ্চ জান্নাত, সবচেয়ে উত্তম ও মধ্যম স্থানে অবস্থিত জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত। আর তার ছাদ হলো দয়াময় আল্লাহর আরশ। (বুখারি: ২৭৯০, ৭৪২৩)
বিজ্ঞাপন
সহিহ হাদিসে জান্নাতের গাছ সম্বন্ধেই বলা হয়েছে- ‘জান্নাতে এমন গাছ রয়েছে, যার ছায়ায় আরোহী এক শ বছর চললেও তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি: ৩২৫১)
সাধারণ জান্নাতির জান্নাতের পরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘দুনিয়া (পৃথিবী) ও তার মতো আরো ১০ দুনিয়ার সমান।’ (বুখারি: ৬৫৭১; মুসলিম: ১৮৬) এ সকল আয়াত-হাদিস থেকে জান্নাতের বিশালতা অনুমান করা যায়।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এত বড় জান্নাত একজন মানুষের পক্ষে কীভাবে উপভোগ করা কিংবা ঘুরে বেড়ানো সম্ভব হবে। এর উত্তরে উলামায়ে কেরাম বলেন, মহান আল্লাহ যাকে যতটা বড় ও প্রশস্ত জান্নাত এবং উপভোগ্য সামগ্রী দেবেন, তাকে তা পরিপূর্ণরূপে উপভোগ করারও শক্তি সামর্থ্য দিয়ে দেবেন। এতে কোনো মুমিনের কোনো ধরনের সন্দেহ থাকার সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুবিশাল, সুন্দর, সুখকর ও চিরস্থায়ী জান্নাতের বাসিন্দা হিসেবে কবুল করুন। পূর্ণ ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

