রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার সুযোগ নেই

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার সুযোগ নেই

‘নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট নিয়মে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ইবাদত করার নামই সালাত। রাসুলুল্লাহ (স.) যখন মেরাজে গমন করেন, মহান আল্লাহ তখন উম্মতে মুহাম্মদির ওপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেন। নামাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন। 

আল্লাহ তাআলার নির্দেশ- ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো; জাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’ (সুরা বাকারা: ৪৩)। ‘হে নবী! আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদের বলুন, নামাজ কায়েম করতে’ (সুরা ইবরাহিম: ৩১)। ‘তোমরা লোকদের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং নামাজ আদায় করবে’ (সুরা বাকারা: ৮৩)


বিজ্ঞাপন


ঈমান আনার পর একজন মুমিনের বড় দায়িত্বটি হলো নামাজ পড়া। এটি আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্যের বিষয়গুলোতে ঈমান আনে এবং নামাজ কায়েম করে’ (সুরা বাকারা: ৩)।  ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, সুন্নাহ পদ্ধতিতে সময়মতো নামাজ পড়তেই হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

আল্লাহ তাআলার এই নির্দেশ অমান্য করা সবচেয়ে বড় কুফুরি। কুফর অর্থ অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহকে অস্বীকার কিংবা কোরআন সুন্নাহর কোনো নির্দেশের অবাধ্য হওয়াকে কুফরি বলা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ত্যাগকারীর ব্যাপারে মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’ (তিরমিজি: ২৬২১)

আরও পড়ুন: নামাজ না পড়া শিরক, না কুফরি?

ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তার জিম্মাদারি তুলে নেন। হজরত মুআজ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে ১০টি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ এটাও যে, তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না’ (মুসনাদে আহমদ: ৫/২৩৮)। এক হাদিসে এসেছে, যার ভেতর নামাজ নেই, তার ভেতর দীনের কোনো হিস্যা নেই। (মুসনাদে বাজ্জার: ৮৫৩৯)


বিজ্ঞাপন


নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত উমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি: ৬২৯১)

ইমাম আহমদ এর মতানুযায়ী, অলসতা করে নামাজ বর্জনকারী কাফের এবং এটাই অগ্রগণ্য মত। কোরআন, হাদিস, সলফে সালেহিনের বাণী ও সঠিক কিয়াসের দলিল এটাই প্রমাণ করে। (আল-শারহুল মুমতি আলা-জাদিল মুসতানকি: ২/২৬)

আরও পড়ুন: নামাজের যেসব ভুল শোধরানো জরুরি

নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বে-নামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। এ বিষয়ে কোরআনের দলিল হচ্ছে- ‘অতএব তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই।’ (সুরা তাওবা: ১১)

দলিলের বিশ্লেষণ হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের মাঝে ও আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্তের জন্য তিনটি শর্ত করেছেন- শিরক থেকে তওবা করা, নামাজ কায়েম করা ও জাকাত আদায় করা। যদি তারা শিরক থেকে তওবা করে কিন্তু নামাজ কায়েম না করে, জাকাত প্রদান না করে তাহলে তারা আমাদের ভাই নয়। আর যদি তারা নামাজও কায়েম করে কিন্তু জাকাত আদায় না করে, তাহলেও তারা আমাদের ভাই নয়। তাই অধিকাংশ আলেম মনে করেন, যেহেতু পাপের কারণে দীনি ভাতৃত্ব নষ্ট হয় না, নামাজ না পড়া দীন থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যাওয়াই প্রমাণ করে। 

বেনামাজিকে কেয়ামতের দিন জাহান্নামের গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। নূহ, ইবরাহিম ও ইসরাঈল (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণনা করার পর পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের পরে এল কিছু অপদার্থ উত্তরাধিকারী, তারা নামাজ নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু তারা নয়—যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে। তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৯)

এই আয়াতে ‘কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে’—এতে প্রমাণ হয়- নামাজ নষ্টকালীন ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণকালীন অবস্থায় তারা ঈমানদার ছিল না। অর্থাৎ তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে না আসা পর্যন্ত নামাজ পরিত্যাগকারীরা কাফের সাব্যস্ত হবে। 

আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবেন না যারা

হাশরে তাদের অবস্থা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩)

কেয়ামতের দিন লাঞ্চনাকর শাস্তি দেওয়া হবে বেনামাজিদের। কোরআনের একটি আয়াতে তার বিবরণ এসেছে এভাবে—‘স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। সেদিন তাদের আহ্বান করা হবে সেজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের আহ্বান করা হয়েছিল সেজদা করতে।’ (সুরা কালাম: ৪২-৪৩)

শুধু পরকালীন শাস্তি নয়, নামাজ না পড়লে ইহকালীন জীবনও বরকতশূন্য হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আসরের সালাত কাজা হয় তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।’ (মুসলিম: ১৩০৪)

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পরকালে মুক্তির উপায়। নামাজ পড়া বড় সৌভাগ্যের বিষয়! আর নামাজ না পড়া চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়! রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যত্নের সঙ্গে আদায় করবে, কেয়ামতের দিন এ নামাজ তার জন্য আলো হবে। তার ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের ওসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কেয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য আলো হবে না। দলিলও হবে না এবং সে আজাব থেকে রেহাইও পাবে না। (মুসনাদে আহমদ: ৬৫৭৬)

উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নামাজ ইসলামি শরিয়তের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান। নামাজ না পড়ে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ নেই। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার মাধ্যমে সবচেয়ে বড় কুফরিতে লিপ্ত নামাজ পরিত্যাগকারীরা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজ ত্যাগ করার কুফরি থেকে তাওবা করার এবং নিয়মিত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর