বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

নামাজ না পড়া শিরক, না কুফরি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২২, ০২:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

নামাজ না পড়া শিরক, না কুফরি?

ঈমান আনার পর একজন মুমিনের বড় দায়িত্বটি হলো নামাজ পড়া। এটি আবশ্যক। ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, সুন্নাহ পদ্ধতিতে সময়মতো নামাজ পড়তেই হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

আল্লাহ তাআলার এই নির্দেশ অমান্য করা শিরক, নাকি কুফরি? এর উত্তর জানতে হলে প্রথমে শিরক এবং কুফর কী জানতে হবে। কুফর অর্থ অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহকে অস্বীকার কিংবা কোরআন সুন্নাহর কোনো নির্দেশের অবাধ্য হওয়াকে কুফরি বলা হয়। আবার যারা শিরক করে তাদেরকে বলা হয় মুশরিক। ইসলামি পরিভাষায় মুশরিকরাও কাফের। শিরকের ব্যাপারে মহান আল্লাহর হুঁশিয়ারি—


বিজ্ঞাপন


‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সঙ্গে শরিক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যা তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সঙ্গে, সে যেন আল্লাহকে অপবাদ দিলো’ (সুরা নিসা: ৪৮)। ‘সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের উপাসনায় কাউকেও শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)

ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দেওয়া শিরক নয়, কিন্তু এটি সবচেয়ে বড় কুফর। ফরজ নামাজ ত্যাগকারীর ব্যাপারে মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। 

যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল (কাফেরের মতো কাজ করল)’ (সহিহ মুসলিম: ৮২)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’ (তিরমিজি: ২৬২১)

ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তার জিম্মাদারি তুলে নেন। হজরত মুআজ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে ১০টি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ এটাও যে, তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকল না’ (মুসনাদে আহমদ: ৫/২৩৮)। এক হাদিসে এসেছে, যার ভেতর নামাজ নেই, তার ভেতর দীনের কোনো হিস্যা নেই। (মুসনাদে বাজ্জার: ৮৫৩৯)


বিজ্ঞাপন


নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত উমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি: ৬২৯১)

ইমাম আহমদ এর মতানুযায়ী, অলসতা করে নামাজ বর্জনকারী কাফের এবং এটাই অগ্রগণ্য মত। কোরআন, হাদিস, সলফে সালেহিনের বাণী ও সঠিক কিয়াসের দলিল এটাই প্রমাণ করে। (আল-শারহুল মুমতি আলা-জাদিল মুসতানকি: ২/২৬)

নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বে-নামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। এ বিষয়ে কোরআনের দলিল হচ্ছে- ‘অতএব তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই।’ (সুরা তাওবা: ১১)

দলিলের বিশ্লেষণ হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের মাঝে ও আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্তের জন্য তিনটি শর্ত করেছেন- শিরক থেকে তওবা করা, নামাজ কায়েম করা ও জাকাত আদায় করা। যদি তারা শিরক থেকে তওবা করে কিন্তু নামাজ কায়েম না করে, জাকাত প্রদান না করে তাহলে তারা আমাদের ভাই নয়। আর যদি তারা নামাজও কায়েম করে কিন্তু জাকাত আদায় না করে, তাহলেও তারা আমাদের ভাই নয়। তাই অধিকাংশ আলেম মনে করেন, যেহেতু পাপের কারণে দীনি ভাতৃত্ব নষ্ট হয় না, নামাজ না পড়া দীন থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যাওয়াই প্রমাণ করে। 

বেনামাজিকে কেয়ামতের দিন জাহান্নামের গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। নূহ, ইবরাহিম ও ইসরাঈল (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণনা করার পর পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের পরে এল কিছু অপদার্থ উত্তরাধিকারী, তারা নামাজ নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু তারা নয়—যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে। তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৯)

এই আয়াতে ‘কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে’—এতে প্রমাণ হয়- নামাজ নষ্টকালীন ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণকালীন অবস্থায় তারা ঈমানদার ছিল না। অর্থাৎ তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে না আসা পর্যন্ত নামাজ পরিত্যাগকারীরা কাফের সাব্যস্ত হবে। 

হাশরে তাদের অবস্থা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩)

উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নামাজ না পড়া শিরক না হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করার মাধ্যমে সবচেয়ে বড় কুফরিতে লিপ্ত নামাজ পরিত্যাগকারীরা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজ ত্যাগ করার কুফরি থেকে তাওবা করার এবং নিয়মিত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর