মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অমুসলিমদের ওপর হামলা ইসলাম সমর্থন করে না 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২২, ১০:৪৮ এএম

শেয়ার করুন:

অমুসলিমদের ওপর হামলা ইসলাম সমর্থন করে না 

ইসলাম শৃঙ্খলার ধর্ম। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অশান্তি সমর্থন করে না ইসলাম। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ (স.) ছিলেন এক অনন্য কালপুরুষ। নবীজির স্পষ্ট ঘোষণা ছিল, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, যারা সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে এবং সাম্প্রদায়িকতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে, তারা আমাদের সমাজভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ: ৫১২৩)

কোনো অবস্থাতেই অমুসলিমদের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি করা যাবে না। সর্বাবস্থায় তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে হবে। আর ইসলামে অপরাধী মানে অপরাধীই। মুসলমান হওয়ার কারণে কোনো অপরাধীকেই ইসলাম নিষ্পাপ ঘোষণা করে না। ন্যায়বিচার পাওয়া অমুসলিমদের অধিকার। আল্লাহ তাআলা মূলত ন্যায়নিষ্ঠদের ভালোবাসেন। ইরশাদ হয়েছে—


বিজ্ঞাপন


‘দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮)

অমুসলিমদের সঙ্গে ভদ্রতা ও সৌজন্য রক্ষার কঠিন নির্দেশ ছিল নবীজির। অন্য ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করার বিষয়েও নিষেধ করেছেন তিনি। ইসলামে প্রতিবেশির হক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই হক রক্ষা করে চলতে হবে। এটি ইসলামের বিধান। এখানে মুসলিম-অমুসলিম পার্থক্য করা হয়নি। প্রতিবেশী যদি অমুসলিম হয়, তার সাথেও প্রতিবেশীর হক রক্ষা করতে হবে। অমুসলিমদের প্রার্থনালয় ও সম্পদ যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে ছিল নবীজির কঠোর নির্দেশ। এ সম্পর্ক রক্ষা করার ওপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে। মহানবী (স.) যুদ্ধে সৈন্যদল পাঠানোর সময় বলতেন, 

‘তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা করো। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি যে. (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না। (ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ: ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ)

নবীজিকে হত্যা করার জন্য কত ষড়যন্ত্রই না করেছিল কাফেররা। লেলিয়ে দিয়েছিল দুষ্টু বালকদের। নবীজির রক্তে রঞ্জিত হয়েছে তায়েফের জমিন। ওহুদের ময়দানে হারাতে হয়েছে পবিত্র দাঁত। তারপরও তিনি তাদের জন্য বদদোয়া করেননি। বরং সাহাবারা যখন রাসুল (স.) এর কাছে আবেদন জানাতেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ 


বিজ্ঞাপন


তখন নবীজি রক্তাক্ত চেহারা মুছতে মুছতে বলতেন, ‘আমি অভিশাপ দেওয়ার জন্য আসিনি, বরং আমি এসেছি ক্ষমা প্রার্থনার জন্য।’ এরপর তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আমার মালিক! আমার লোকদের ক্ষমা করুন। তারা জানে না যে, তারা কী করছে।’ (মুসলিম: ২৫৯৯, ইবনে হিব্বান: ৯৮৫) 

অমুসলিমদের সঙ্গে এই ছিল নবীজির আচরণ। কোনোভাবেই অমুসলিমদের বাড়িঘরে হামলা, মন্দিরে আক্রমণ করা যাবে না। এটি ইসলামের শিক্ষা নয়। বরং নবীজি বলেন—

 ‘যদি কোনো মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার ওপর সাধ্যাতীত বোঝা (জিজিয়া) চাপিয়ে দেয় অথবা তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষালম্বন করব।’ (মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার: ৫৭৫০)

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, বিশ্বনবী (স.)-এর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ উদার নীতি ও দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। ইসলাম ও মুসলমানদের লালিত এবং প্রিয়নবী (স.)-এর সুমহান আদর্শগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবী (স.)-এর আদর্শ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর