রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৮টি জান্নাতের নাম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

৮টি জান্নাতের নাম

জান্নাত নেককার বান্দাদের চিরস্থায়ী ভোগ-বিলাসের স্থান। যেখানে মৃত্যু নেই, রোগ-বালাই নেই, বার্ধক্য নেই। সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার স্থান জান্নাত। ইসলামি পরিভাষায়, আখেরাতে ঈমানদার ও নেককার বান্দাদের জন্য যে আবাস্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে, তাকে জান্নাত বলা হয়। 

জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (সুরা সাজদাহ: ১৩; বুখারি: ৩২৪৪)


বিজ্ঞাপন


পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতের বিভিন্ন নাম উল্লেখ করেছেন। তবে জান্নাত মূলত একটি; গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় এর নাম একাধিক। যা জান্নাতের স্তর হিসেবে বিবেচ্য। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, গুণাবলির বিবেচনায় জান্নাতের নাম একাধিক, কিন্তু জান্নাত একাধিক নয় একটিই। সুতরাং এ দিকটির বিবেচনায় একাধিক নামের অর্থ অভিন্ন আর জান্নাতের গুণাবলির দিক বিবেচনায় প্রতিটি নামের অর্থ ভিন্ন। (হাদিউল আরওয়াহ: পৃষ্ঠা-১১১)

আরও পড়ুন: বেশি মানুষ বেহেশতে যাবে যে দুই কারণে

মহান আল্লাহ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় জান্নাতের যেসব নাম ব্যবহার করেছেন, সেখানে ৮টি নাম পাওয়া যায়। যেমন-

১) জান্নাতুল ফিরদাউস (স্বর্গের উদ্যান): এটি এমন জান্নাত যা আরশের কাছাকাছি অবস্থিত। ঈমান ও সৎকর্মশীলদের জন্য মহান আল্লাহ যে জান্নাত সাজিয়ে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায় সেই জান্নাতকে জান্নাতুল ফিরদাউস নামে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সুরা কাহাফ: ১০৭)


বিজ্ঞাপন


২) জান্নাতুন নাঈম (সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও নেয়ামতের উদ্যান): আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুত্তাকিদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত।’ (সুরা কলম: ৩৪)

৩) জান্নাতুল মাওয়া (প্রকৃত আশ্রয়স্থল): নেককার ও শহিদদের রুহগুলো এখানে এসে আশ্রয় নেবে, এখান থেকে তারা আর বাইরে বের হবে না। এ জন্য এর নামকরণ করা হয় ‘জান্নাতুল মাওয়া’। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে তাদের জন্য তাদের আমলের প্রতিদানস্বরূপ রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া।’ (সুরা সাজদাহ: ১৯)

আরও পড়ুন: জাহান্নামের আগুন থেকে পরিবারকে বাঁচাবেন যেভাবে

৪) জান্নাতুল আদন (স্থায়ী জান্নাত): জান্নাত যেহেতু চিরস্থায়ী আবাস, কখনও শেষ হবে না, তাই জান্নাতের আরেক নাম জান্নাতুল আদন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জান্নাতুল আদন, তারা তাতে প্রবেশ করবে, যার তলদেশে ঝরনাসমূহ বয়ে গিয়েছে। তাদের জন্য সেখানে তারা যা চাইবে তাই রয়েছে, এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকিদের পুরস্কার দিয়ে থাকেন।’ (সুরা নাহল: ৩১)

৫) দারুস সালাম (শান্তির আবাস): মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের রবের কাছে তাদের জন্য রয়েছে শান্তির আবাস এবং তারা যা করত তার জন্য তিনিই তাদের অভিভাবক।’ (সুরা আনআম: ১২৭)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ (দারুস সালাম) শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন সরল পথের দিকে।’ (সুরা ইউনুস: ২৫)

৬) দারুল খুলদ (স্থায়ী শান্তি): খুলদ শব্দের অর্থ স্থায়ী হওয়া। জান্নাতিরা সেখানে চিরস্থায়ী হবে, কখনও বের হবে না, তাই জান্নাতিদের অবস্থার আলোকে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাতে শান্তির সঙ্গে প্রবেশ করো, এটাই (খুলদ) স্থায়িত্বের দিন।’ (সুরা কাফ: ৩৪)
আরও ইরশাদ হয়েছে- তারাই, যাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম। (সুরা ফুরকান: ৭৫) এই আয়াতে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পুরস্কার হিসেবে ঠিক করা জান্নাতকে ‘জান্নাতুল খুলদ’ নামে অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন: জান্নাতে পুরুষের জন্য হুর, নারীর জন্য কী?

৭) দারুল মাকাম (স্থায়ী নিবাস): দারুল মাকাম অর্থ স্থায়ী আবাসের বাড়ি। জান্নাত হচ্ছে প্রকৃত স্থায়ী আবাসের বাড়ি, এখান থেকে কাউকে কখনও উচ্ছেদ করা হবে না। তাই এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে (দারুল মাকাম) স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোনো কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং কোনো ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না।’ (সুরা ফাতির: ৩৫) এই আয়াত মহান জান্নাতকে দারুল মাকাম বা স্থায়ী আবাস বলে অভিহিত করেছেন, যেহেতু জান্নাতে প্রবেশকারীরা সেখানে স্থায়ী হবে।

৮) দারুল কারার (এমন আবাস যার শুরু আছে ‍কিন্তু শেষ নেই): আখেরাতে বিচার-ফয়সালার পর জান্নাতে বসবাস শুরু হবে আর কোনো দিন তা শেষ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার কওম, এ দুনিয়ার জীবন কেবল ক্ষণকালের ভোগ; আর নিশ্চয়ই আখেরাত হলো (দারুল কারার) স্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির: ৩৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। যেসব আমল করলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করবেন সেই আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর