বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

পণ্য মজুদ করার ইহকালীন শাস্তি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

যারা অবৈধ উপায়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, তাদের ব্যাপারে ইসলাম খুব কঠোর। ভয়ঙ্কর শাস্তি নির্ধারিত আছে তাদের জন্য। দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর অন্যতম উপায় মজুদদারি। অসাধু ব্যবসায়ীরা মূলত পণ্য মজুদ করার মাধ্যমেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। ফলে ক্রেতারা সংকটে পড়েন। 

অথচ অধিক মুনাফার জন্য পণ্য মজুদ করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাদিস অনুযায়ী শুধু পরকালে নয়, ইহকালেও আল্লাহর আজাব থেকে রেহাই দেওয়া হবে না তাদের। মহানবী (স.) বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২২৩৮) 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: পরকালে ১০ শ্রেণির মানুষের ভয়-চিন্তা নেই

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুদ রাখে, সে আল্লাহ-প্রদত্ত নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২০৩৯৬)

ভোক্তাদের জিম্মি করে বিত্তশালী হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই; বরং ক্ষতি আর ক্ষতি। অবৈধ উপার্জন একদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ, অন্যদিকে দুনিয়ার জীবনও অভিশপ্ত। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ায় তার নামাজ, রোজা, হজসহ কোনো নেক আমলই কবুল হবে না। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে যান। তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, আল্লাহ দূরে গেলেন তার কাছ থেকে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮/৪৮১)

সুতরাং বর্তমান সময়ে পণ্য মজুদ করে যারা দাম বৃদ্ধি করছেন, তারা মূলত ইসলাম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন। পবিত্র কোরআনে তাদের সতর্ক করা হয়েছে এভাবে—‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহচ্ছন করে রেখেছে। এমনকি তোমরা কবরে পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা তাকাসুর : ১-২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: যেমন হবে কবরের প্রথম প্রহর

অন্যদিকে, মজুদদারি না করে স্বাভাবিক ব্যবসা করলে তা পরিণত হবে ইবাদতে। হালাল ব্যবসা থেকে উপার্জনে বরকত রয়েছে এবং অপ্রত্যাশিত রিজিক দেওয়া হয় তাকে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর পণ্য মজুদকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ২/৭২৮)

হাশরের ময়দানেও হালাল ব্যবসায়ীকে পুরস্কৃত করা হবে; নবীগণের সঙ্গী হওয়ার পরম সৌভাগ্য লাভ করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের হাশর নবী, সিদ্দিক ও শহীদগণের সঙ্গে হবে।’ (তিরমিজি: ৩/৫১৫)

সুতরাং ব্যবসায়ীদের উচিত ব্যবসায় অবৈধ উপায় বন্ধ করা। অকারণে পণ্যের দাম বাড়ানো থেকে বিরত থাকা। অবৈধ মজুদ বন্ধ করা। অমানবিকতা বন্ধ করে ভ্রাতৃত্ববোধকে সুসংহত করা এবং বিগত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করা।

আরও পড়ুন: তওবা করার নিয়ম

নবী কারিম (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত’ (তিরমিজি: ১২১০)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল ব্যবসায়ীদের মুনাফার জন্য পণ্য মজুদ করা থেকে হেফাজত করুন। নিজ নিজ ব্যবসাকে ইবাদতে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর