জীবনের নানাবিধ বাধাবিপত্তি ও প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মানসিক চাপমুক্ত থাকা খুবই কষ্টকর। একচিলতে শান্তির জন্য সবাই অস্থির। কিন্তু একজন মুমিন কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। নিচে এমন পাঁচটি আমল তুলে ধরা হলো।
১. উত্তমভাবে নামাজ আদায় করা: রাসুল (স.) বলতেন, ‘হে বিলাল, (আজানের মাধ্যমে) নামাজ কায়েম করো। আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো।’ (আবু দাউদ: ৪৯৮৫-৪৯৮৬)
বিজ্ঞাপন
২. কোরআন তেলাওয়াত করা: রাসুল (স.) কোরআন পাঠের মাধ্যমে প্রশান্তি অনুভব করতেন। তিনি এভাবে দোয়া করতেন—اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ القُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা আন তাজ-আলাল কুরআ-না রাবিআ ক্বালবি, ওয়া নূরা সদরি, ওয়া জালা-আ হুযনি ওয়া যাহা-বা হাম্মি।’ অর্থ: হে আল্লাহ, তোমার কাছে চাই, যেন তুমি কোরআনকে করে দাও আমার হৃদয়ের বসন্ত (আগ্রহ-ভালোবাসা); আমার বক্ষের জন্য আলো; আমার দুশ্চিন্তার নির্বাসন এবং আমার পেরেশানি দূরকারী। (মুসনাদ আহমদ: ৩৭১২; সিলসিলা সহিহাহ: ১৯৯)
আরও পড়ুন: মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামি নির্দেশনা
৩. আল্লাহর জিকির করা: আল্লাহর জিকির মুমিনের অন্তরকে প্রশান্ত করে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘...জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হৃদয়গুলো স্থির-প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ: ২৮)
৪. আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করা: মানসিক প্রশান্তির জন্য এবং অশান্তি থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন- ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (সহিহ মুসলিম: ২/৩৪১)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা কাটে যে দোয়ায়
৫. তাকদিরের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা: সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সবকিছুর ক্ষেত্রেই মুমিন বান্দা তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। দুঃখ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের উপর বিশ্বাস থাকলে কোনো মানুষই মানসিক চাপে ভোগে না। তাই মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তাকদিরের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ’আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস: ১০৭)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার আগেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ: ২২)
এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, আল্লাহর নির্ধারিত বিষয়গুলো সংঘটিত হবেই। এসব বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই, যদি তিনি ইচ্ছা না করেন। তাই তাকদিরের ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাঁর কাছে দোয়া করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মানসিক প্রশান্তির জন্য উপরোক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

