সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

কোরআনের ভুল ধরতে গিয়ে আলোর পথের দিশারি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২২, ০১:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

আরবি সাহিত্যের সর্বোচ্চ গ্রন্থ হচ্ছে পবিত্র কোরআন। আরবি ভাষার সব ব্যাকরণ এসেছে কোরআন থেকে। পবিত্র কোরআন আরবদের ভাষা ও সংস্কৃতির মানদণ্ড। অর্থাৎ ভাষার বিশুদ্ধতার সত্যায়ন করে কোরআন। তাই কোরআনে ভুল থাকার প্রশ্ন করাই অবান্তর। সুরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ তাআলা সে কথাই জানিয়ে দিয়েছেন এভাবে, ‘জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিহি’ অর্থাৎ ‘এই কিতাব, এতে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই’। 

এখানে কিতাব বলতে যা কিছু তাতে আছে, সব কিছুই সন্দেহাতীতভাবে শুদ্ধ ও সত্য। একটি নোকতা, হরকত, অক্ষর, শব্দ, বাক্য—সব কিছুই নির্ভুল এবং প্রতিটি আয়াতই সংশয়মুক্ত, ভুল-ভ্রান্তি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত-পবিত্র। কোরআন ছিল আরব কবিদের জন্য এক মহাবিস্ময়। কোরআনের অলংকার ও শৈলী তাদের হতবাক করে দিয়েছিল।


বিজ্ঞাপন


কোরআনের এই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি কোরআনের অনুরূপ কিছু উপস্থিত করতে মানুষ ও জিন জাতিকে একত্র করা হয়, তবু তারা তার অনুরূপ কিছু উপস্থিত করতে পারবে না। যদিও তারা পরস্পরের সহযোগী হয়।’ (সুরা ইসরা: ৮৮)

কোরআনের ভুল ধরতে গিয়ে তাই অন্য ধর্মের স্কলারদের উল্টো ইসলাম গ্রহণ করতে দেখা যায়। এমন ঘটনার নজির অসংখ্য। এটি বিস্ময়কর ব্যাপার। অধ্যাপক ড. গ্যারি মিলারের নাম অনেকে শুনেছেন। পত্র-পত্রিকায় তাঁর ইসলামগ্রহণের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। ২০১৮ সালের কথা। তিনি ছিলেন কানাডার খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। তিনি পবিত্র কোরআনের মধ্যে ভুল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে ইসলাম ও কোরআন বিরোধী প্রচারণা চালানো সহজ হয়। কিন্তু কোরআন পড়ার পর নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হন। ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম দেওয়া হয় আবদুল আহাদ উমার।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম কোরআন নাজিল হয়েছিল ১৪০০ বছর আগে এবং আরবের মরুচারীদের মধ্যে। তাই এতে নিশ্চয় মরুভূমি সম্পর্কে কথা থাকবে এবং খুব সহজেই এতে অনেক ভুল খুঁজে পাব ও সেসব ভুল মুসলিমদের সামনে তুলে ধরব। কিন্তু কোরআন পড়ার পরে বুঝলাম আমার ধারণা ঠিক নয়। অর্থাৎ ইসলামের দোষ ধরতে গিয়েই তিনি হয়ে গেলেন ইসলামের কাছে আত্মসমর্পনকারীদের একজন।

‘ইরিনা হানদোনো’ ইন্দোনেশিয়ার সুপরিচিত এক নাম। কিশোর বয়সেই তিনি চার্চের কার্যক্রমে অংশ নিতেন। হাইস্কুলের পড়া শেষ করার পর চার্চের বাইরে বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশ নিতেন। ধর্ম-দর্শন বোঝার জন্য তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়েও পড়েন। 


বিজ্ঞাপন


 তিনি বলেন, আমার অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের ত্রুটিবিচ্যুতি ও দুর্বলতা খুঁজে বের করা। মিশন শুরু করলাম। আমি কোরআন নিয়ে বসলাম এবং এমনসব বিষয় অনুসন্ধান শুরু করলাম, যা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারব। প্রথমেই আমার চোখে পড়ল— ‘বলুন! তিনি আল্লাহ। তিনি এক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। এবং কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়।’ (সুরা ইখলাস)

সুরাটি ইরিনাকে নাড়া দিয়ে যায়। এরপর ঈশ্বরের ত্রিত্ববাদ ধারণাটাই যে ভুল, সেটি বুঝতে পারেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুরা ইখলাস পাঠ করলাম, যেন কিছু আমার অন্তরে প্রবেশ করল। আমার কোনো সংশয় রইল না যে, আল্লাহ এক। ব্যক্তিগত গবেষণা চালিয়ে গেলাম। জানলাম, ত্রিত্ববাদের ধারণা মানুষের তৈরি, যার উদ্ভব হয়েছে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দের পর। আগে তা ছিল না। বিষয়টি আমার ক্যাথলিক পরিচয়কেই বোঝা করে তুলল। এরপর মুসলিম হতে এবং নতুন ধর্মবিশ্বাসের প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে আমার ছয় বছর লেগেছিল। ১৯৮৩ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন ইরিনা। 

‘আমিনা এসলিমি’ নামের একজন মার্কিন নও-মুসলিম মহিলার ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা অনেকেরই জানা। পেশায় সাংবাদিক আমিনা এসলিমি ছিলেন একজন গোঁড়া খ্রিস্টান ও খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারক। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি ধর্ম প্রচার করতেন। মনে করতেন, ইসলাম একটি কৃত্রিম ধর্ম এবং মুসলমানেরা হলো অনুন্নত ও পশ্চাদপদ একটি জাতি। মুসলমানদের কাছে ইসলামের ভুল ত্রুটি তুলে ধরার জন্য তিনি ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করেন। 

এই পড়াশোনা তাকে একটু একটু করে বদলে দিতে থাকে। দেড় বছরের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে কালিমা পড়ে মুসলমান হন আমিনা এসলিমি। তিনি এখন ইসলামের একজন একনিষ্ঠ প্রচারক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ইসলাম সম্পর্কে তার অনুভূতি তুলে ধরে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। তার দাওয়াতে তার দাদি, মা, বাবা, ভাই, বোন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। 

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়— পবিত্র কোরআনের ভুল ধরতে চাইলেও সবার উদ্দেশ্য ছিল সুন্দর। শুধু তর্ক করার জন্য তারা কোরআনের ভুল ধরতে চাননি। বরং কোরআনের ভুলগুলো সুন্দরভাবে মুসলমানদের কাছে তুলে ধরাই ছিল উদ্দেশ্য। কারণ, কোরআনের অনুসারীদেরকে তারা অন্ধ-অনুসারী, বর্বর ও অসভ্য মনে করতেন। 

আল্লাহ কতইনা সুন্দর বলেছেন, এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে নাজিল হতো, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখা যেত।’ (সুরা নিসা: ৮২)

মূলত তারা সৎ উদ্দেশ্য নিয়েই তারা কোরআনের ভুল খুঁজতে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু কোরআন পড়ার পর তাদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেলো- তারা নিজেরাই এতদিন ভুল পথে ছিলেন। আর ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন।’ (সুরা কাসাস: ৫৬) 

উপরোক্ত দীর্ঘ আলোচনায় সমালোচকদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। যারা শুধু তর্ক করার উদ্দেশ্য নিয়ে কোরআন না পড়েই কিংবা অনুবাদ দেখেই সমালোচনা শুরু করে দেয়, তারা শুধু তর্কই করতে থাকে। ওসব হতভাগারা মহাসত্যের ধারে-কাছেও পৌঁছতে পারে না। আল্লাহ তাআলা সত্য অনুসন্ধানকারীদের হেদায়াত দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর