সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জোহর-আছর নামাজে কিরাত নিম্নস্বরে পড়তে হয় কেন?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০৭:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

জোহর-আছর নামাজে কিরাত নিম্নস্বরে পড়তে হয় কেন?

জোহর ও আছর নামাজে কিরাত আস্তে পড়তে হয়। আর মাগরিব, ইশা ও ফজরের নামাজে কিরাত জোরে বা উচ্চৈঃস্বরে পড়ার নিয়ম। এটি শরিয়তের বিধান। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আমলের মাধ্যমে এই বিধান প্রমাণিত। ফলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য হলো নবীজির অনুসরণে আমল করা। 

জোহর-আছর নামাজে কিরাত আস্তে পড়ার দলিল
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) যেখানে কিরাত (উচ্চৈঃস্বরে) পড়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছেন, সেখানে পড়েছেন। আর যেখানে চুপ করে থাকতে (নিম্নস্বরে পড়তে) নির্দেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ করে থেকেছেন। (আল্লাহ তাআলার বাণী) “নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসুল (স.)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (বুখারি: ৭৩৮)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নামাজে সন্দেহ হলেই কি সাহু সেজদা?

আবু মামার (রহ.) সাহাবি খাব্বাব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রাসুল (স.) জোহর ও আছরে কিরাত পড়তেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়তেন। আবু মামার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কীভাবে বোঝা যেত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসুল (স.)-এর দাড়ি নড়াচড়া দেখে বোঝা যেত। (বুখারি: ৭৬০)

‘সুন্নত হচ্ছে— ফজর, মাগরিব ও ইশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাজে উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত করা। আর জোহর ও আছর নামাজে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং ইশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।’ (আল-মাজমু, খণ্ড: ০৩, পৃষ্ঠা-৩৮৯)

ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, জোহর ও আছরের নামাজে চুপেচুপে তেলাওয়াত করবে। মাগরিব ও ইশার নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং ফজরের নামাজের সব রাকাতে উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত করবে...। এর দলিল হচ্ছে— নবী (স.)-এর আমল। এটি পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পরবর্তীদের কাছে প্রচারের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব, কেউ যদি চুপেচুপে পড়ার নামাজে উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত করে কিংবা উচ্চৈঃস্বরে তেলাওয়াত করার নামাজে চুপেচুপে পড়ে— তাহলে সে সুন্নতের বিপরীত কাজ করলো। তবে এমন করলেও তার নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।’ (আল-মুগনি, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা-২৭০)


বিজ্ঞাপন


এভাবে নামাজ পড়া সুন্নত নাকি ওয়াজিব
প্রথমত এটি শরিয়তের বিধান, তাই এভাবে পড়তে হয়। প্রত্যেক মাজহাবের ইমামগণ এক্ষেত্রে একমত। আর হানাফি মাজহাবমতে, উল্লিখিত নামাজগুলোতে এভাবে পড়া— ইমামের জন্য ওয়াজিব। মুনফারিদ বা একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য সুন্নত।

আরও পড়ুন: নারীর মসজিদে নামাজ পড়া কতটুকু শরিয়তসম্মত?

এছাড়াও জোহর-আছর নামাজ দিনে হয়। দিনে মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ হয়ে থাকে। তাই দিনের নামাজের ক্ষেত্রে আস্তে কেরাত পড়ার কথা বলা হয়েছে। এতে কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। রাতে মানুষের ব্যস্ততা কম থাকে। সাধারণত আওয়াজও থাকে কম। চারদিক থাকে নীরব নিস্তব্ধ। তাই রাতে জোরে পড়ার কথা বলা হয়েছে। মুসল্লিরা এতে ভালোভাবে কোরআন শ্রবণ করতে পারে। (হাশিয়াতুত তাহতাভি আলা মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-২৫৩; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া,  খণ্ড: ০৭, পৃষ্ঠা-৪০)

জোহর-আছর নামাজে কিরাত আস্তে পড়ার হিকমত
মৌলিকভাবে এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা নেই। তবে একটি হিকমত এই ছিল যে, দিনের বেলা জোরে কিরাত পড়লে— আরবের মুশরিকরা কিরাতকে ঠাট্টা করে জোরে জোরে আওয়াজ করে বিরক্ত করত। যেটা রাতের বেলায় করা হতো না। তাই দিনে আস্তে কিরাতের বিধান এসেছে, আর রাতে উচ্চৈঃস্বরের বিধান।

তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, একটি কেবল একটি প্রজ্ঞা-নিঃসৃত ভাবনা। মূলত আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী নবী কারিম (স.) যেভাবে নামাজ পড়েছেন, আমরাও সেভাবে নামাজ পড়ি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নতের পাবন্দি হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর