সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

নারীর মসজিদে নামাজ পড়া কতটুকু শরিয়তসম্মত?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২২, ০২:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

নারীর মসজিদে নামাজ পড়া কতটুকু শরিয়তসম্মত?

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে নারীদের মসজিদে নামাজ পড়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তবে তাদের মসজিদে আসার জন্য কিছু শর্ত ছিল। যেমন ক) সম্পূর্ণ আবৃত ও পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। খ) সেজেগুজে খুশবু লাগিয়ে বের না হওয়া। গ) বাজনাদার অলংকার, চুড়ি ইত্যাদি পরে আসতে পারবে না। ঘ) অঙ্গভঙ্গি করে চলতে পারবে না। ঙ) পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলবে। চ) অপ্রয়োজনে কোনো বেগানা পুরুষের সঙ্গে কথা বলবে না। সর্বোপরি তাদের এই বের হওয়া ফেতনার কারণ হবে না। (সুনানে আবু দাউদ: ৫৬৫, আহকামুল কোরআন, থানভি: ৩/৪৭১, বাজলুল মাজহুদ: ৪/১৬১)

কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বিদায়ের পর সাহাবিরা নারীদের মসজিদে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে উপরোক্ত শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া। এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নারীরা যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা যদি রাসুল (স.) জানতেন, তবে বনি ইসরাইলের নারীদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিল, তেমনি তাদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি: ৮৬৯) 

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) লিখেছেন, ‘আয়েশা (রা.)-এর এই মন্তব্য তো রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্পর্কে। অথচ আজকের যুগের নারীদের উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সে যুগে ছিল না। তাহলে এ অবস্থা দেখে তিনি কী মন্তব্য করতেন?’ (উমদাতুল কারি: ৬/১৫৮)

এখানে কিছু মুসলিম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন যে, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নতকে ডিঙিয়ে কারো কথা মানা উচিত হবে না। নাউজুবিল্লাহ। এই চিন্তা তাদের অজ্ঞতার প্রতিফলন। সাহাবিদের সুন্নত কখনো হাদিসের বিরুদ্ধে যায় না, বরং আল্লাহ ও রাসুলের (স.) হক আদায়ে তাঁরাই শ্রেষ্ঠ। 

তাছাড়া মনে রাখতে হবে- হাদিস শরিফের পাশাপাশি সাহাবিদের আমলও দলিলরূপে গণ্য। কেননা তাঁরা ছিলেন সত্যের মাপকাঠি। রাসুল (স.) সুস্পষ্ট বলেছেন, ‘তোমরা আমার পরে খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, যেমন মাড়ির দাঁত দিয়ে কোনো জিনিস মজবুতভাবে ধরা হয়।’ (আবু দাউদ: ৪৬০৭)

হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নিজ খেলাফত আমলে যখন মহিলাদের পরিবর্তিত অবস্থা দেখেন এবং ফেতনার আশঙ্কা দিন দিন বাড়তে থাকে, তখন উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.), ইবনে মাসউদ ও ইবনুজ জুবায়ের (রা.)-সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন। অন্য সাহাবায়ে কেরামও এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন। কেননা তাঁরা জানতেন—মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নির্দেশের বিরোধিতা করা হয়নি; বরং তাঁর ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


এখন আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি যে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) নিজ যুগ তথা হিজরি নবম শতাব্দীর নারীদের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরি পঞ্চদশ শতাব্দীতে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতার দিকে ছুটছে, বেপর্দার ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের পোশাক পরছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তাঘাটে বেড়াচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে অবলা মা-বোনদের সওয়াবের স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার চেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

অথচ এর জন্য দলিল দেওয়া হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগের নারীদের দ্বারা। এ যুগের নারীরা কি সে যুগের নারীদের মতো? কখনও নয়। তা সত্ত্বেও সে যুগেই নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে এ যুগের নারীদের মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে নামাজের জন্য উৎসাহ দেওয়া যায়?

নারীদের মসজিদে যাওয়ার হাদিসগুলোর ব্যাখ্যা না জানার কারণেই মূলত বিপত্তিটা বেড়েছে। তাই আসুন এ সম্পর্কিত কিছু হাদিস ও তার ব্যাখ্যা জেনে নেই। 

এক. হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ করো না।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৪২; আবু দাউদ: ৫৬৬)

উল্লিখিত হাদিসের ব্যাখ্যা হলো, ইসলামের প্রথম যুগে নারীরা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদের নিষেধ করা হতো না। ওই নির্দেশ সাময়িক ও শর্তসাপেক্ষ ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের কারণে ও শর্ত না পাওয়ার কারণে এখন নিষেধ করাটাই সুন্নত। কারণ রাসুল (স.)-এর যুগ অহি নাজিলের যুগ ছিল। তাই নারীরা যাতে বিভিন্ন সময় অবতীর্ণ আয়াত ও শরিয়তের বিভিন্ন বিধান সরাসরি রাসুল (স.) থেকে ভালোভাবে শিখে নিতে পারেন, সেজন্য নারীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়নি। কিন্তু পরে এই প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম নিষেধ করে দেন।

আল্লামা ইবনে হাজর (রহ.) বলেন, এ হাদিসে যদিও স্বামীকে নিষেধ করতে বারণ করা হয়েছে, এ বারণ কঠোর নিষেধ নয়, বরং তা হলো সাধারণ নিষেধ। এজন্যই স্বামী অনুমতি দিলেও ইসলামি রাষ্ট্রপ্রধান ফেতনার আশঙ্কায় নারীদের মসজিদে আসা নিষেধ করতে পারবেন। (মিরকাতুল মাফাতিহ: ৩/৮৩৬)

দুই. নারীদের মসজিদে যাওয়া সম্পর্কে দ্বিতীয় হাদিস হলো, উম্মে আতিয়া (রা.) বলেন, আমাদের আদেশ করা হয়েছে যে আমরা যেন ঋতুমতী পর্দানশিন নারীদেরও ঈদের ময়দানে নিয়ে যাই। যাতে তাঁরা মুসলমানদের জামাত ও দোয়ায় শরিক থাকতে পারেন। তবে ঋতুবতী নারীরা নামাজের জায়গা থেকে আলাদা থাকবে। জনৈকা সাহাবিয়া বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের অনেকের তো চাদরও নেই। রাসুল (স.) বললেন, তাকে যেন তার বান্ধবী নিজ চাদর দিয়ে সাহায্য করে। (সহিহ বুখারি: ৯৭৪)

ব্যাখ্যা: এখানেও আগের উত্তরটি প্রযোজ্য। আর তা হলো, নারীরা যাতে ঈদের দিনের যাবতীয় শরয়ি বিধান সরাসরি রাসুল (সা.) থেকে ও রাসুলের ঈদের খুতবায় যাবতীয় ওয়াজ-নসিহত ও মাসয়ালা-মাসায়েল ভালোভাবে শিখে নিতে পারে, সে জন্য রাসুল (সা.)-এর যুগে ঈদগাহে আসার অনুমতি ছিল। কিন্তু পরে এই প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম নিষেধ করে দেন।

ইমাম তাহাবি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নারীদের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ছিল, যাতে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য দেখে ইসলামের দুশমনদের যেন চক্ষুশূল হয়। কিন্তু আজ যেহেতু সেই পরিস্থিতি নেই এবং সংখ্যাধিক্য দেখানোর জন্য পুরুষরাই যথেষ্ট, তাই ওই বিধানও প্রযোজ্য হবে না। (ফাতহুল বারি: ২/৪৭০)

আল্লামা ইবনুল হাজ মালেকি (রহ.) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, বিধানটি রাসুল (সা.)-এর যুগের বৈশিষ্ট্য। পরবর্তী যুগের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। (আল মাদখাল: ২/২৮৮)

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সময়ে নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়নি বলে এই যুগে নারীদের মসজিদে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করলে সাহাবিদের সুন্নতের অমর্যাদা করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, ‘ওমর (রা.)-এর এক স্ত্রী (আতেকা বিনতে জায়েদ) ফজর ও এশার নামাজে জামাতের জন্য মসজিদে যেতেন। 

তাঁকে বলা হলো, ‘আপনি কেন নামাজের জন্য বের হন? অথচ আপনি জানেন যে হজরত ওমর (রা.) তা অপছন্দ করতেন ও আত্মমর্যাদাবোধের পরিপন্থী মনে করেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘তাহলে ওমর কেন আমাকে সরাসরি নিষেধ করেন না?’ তখন বলা হলো যে রাসুল (স.)-এর বাণী রয়েছে—তোমরা আল্লাহর বান্দিদের আল্লাহর মসজিদ থেকে নিষেধ করো না—এ কথার কারণে তিনি সরাসরি নিষেধও করছেন না।’ (সহিহ বুখারি: ৯০০)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, স্ত্রী আতেকা বিবাহের সময় ওমর (রা.)-কে মসজিদে নববিতে গিয়ে নামাজের অনুমতি দেওয়ার শর্ত করেছিলেন, এ জন্য ওমর (রা.) অপছন্দ সত্ত্বেও স্ত্রীকে নিষেধ করতে পারছিলেন না (আল ইসাবাহ: ৮/২২৮)। 

আবু আমর শায়বানি (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন নারীদের মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (আল মুজামুল কাবির: ৯৪৭৫) আল্লামা হাইসামি (রহ.) বলেন, এ হাদিসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য (সেকা)। (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ২/৩৫)

হজরত জুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) তাঁর পরিবারের কোনো নারীকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে যেতে দিতেন না (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৫৮৪৬, হাদিসটি সহিহ)। হজরত ইবনে ওমর (রা.) তাঁর স্ত্রীদের ঈদগাহে বের হতে দিতেন না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৫৮৪৫, হাদিসটি সহিহ)

তবে, ফিকাহবিদদের মতে, প্রথমদিকের কিছু ওলামায়ে কেরাম বৃদ্ধাদের জন্য মাগরিব ও এশার সময় ফেতনামুক্ত হওয়ার কারণে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। পরবর্তী ফিকাহবিদরা ফেতনার ব্যাপকতার কারণে যুবতী ও বৃদ্ধা সবার জন্য সব নামাজে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। (শরহুস সগির: ১/৪৪৬; আল মাজমু: ৪/১৯৮; আল মুগনি:  ২/১৯৩)

হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাদায়েউস সানায়েতে বলা হয়েছে—‘যুবতী নারীদের মসজিদে যাওয়া ফেতনা।’ (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৫৬)

আল্লামা ইবনে নুজাইম মিসরি ও আল্লামা হাসকাফি (রহ.) বলেন, বর্তমান যুগে ফেতনার ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় ফতোয়া হলো—সব নারীর জন্যই সব নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করা মাকরুহে তাহরিমি। (আল বাহরুর রায়েক: ১/৬২৭-৬২৮, আদ্দুররুল মুখতার: ১/৩৮০)

অনেক ভাই বলে থাকেন যে, মক্কা-মদিনার হারামাইন শরিফে নারীরা মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এখানে কেন নিষেধ হবে? এর উত্তর হলো—আসলে হারামাইনে কিছু বিশেষ প্রয়োজনের কারণে নারীদের জামাতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তা হলো, নারীদের যেহেতু মক্কার মসজিদে হারামে তাওয়াফের জন্য আসতে হয় এবং মদিনার মসজিদে নববিতে জিয়ারতের জন্য তাঁরা এসে থাকেন। 

এ অবস্থায় নামাজের আজান হয়ে গেলে আর বের না হয়ে তাঁরা মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ওলামায়ে কেরাম এর অনুমতি দিয়েছেন। তবে শুধু কেবল জামাতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে নারীদের হারামাইনে যাওয়ার অনুমতি নেই। বর্তমানে না জেনে অনেক মহিলা শুধু নামাজের জন্যই হারামাইনে উপস্থিত হয়ে থাকেন, তা ঠিক নয়। (ইলাউস সুনান: ৪/২৩১) 

নারীদের নামাজসংক্রান্ত অসংখ্য হাদিস আছে, যেগুলোতে তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের মসজিদে আসতে নিরুৎসাহী করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘ক্ষুদ্র কক্ষে নারীদের নামাজ বড় কামরার নামাজের তুলনায় উত্তম। ঘরের নির্জন কোণে নামাজ ক্ষুদ্র কক্ষের নামাজের তুলনায় উত্তম।’ (আবু দাউদ: ৫৭০ (হাদিসটি সহিহ)]

অন্য বর্ণনায় হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নারীদের ঘরে নামাজ পড়া ঘরের বাইরে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম’ (আল মু’জামুল আওসাত: ৯১০১)। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘নারীদের নামাজের উত্তম জায়গা হলো তাদের ঘরের নির্জন কোণ।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৬৫৪২, হাদিসটি হাসান)

আবু হুমাইদ আল সাঈদি থেকে বর্ণিত, একবার উম্মে হুমাইদ নামক একজন মহিলা সাহাবি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে গিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে আগ্রহী।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘আমি জানি তুমি আমার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পছন্দ করো। কিন্তু তোমার জন্য বড় কামরার তুলনায় ঘরের অন্দরমহলে নামাজ পড়া উত্তম। আবার বড় কামরায় নামাজ পড়া উত্তম বারান্দায় নামাজ পড়ার চেয়ে। তোমার মহল্লার মসজিদের চেয়ে বারান্দায় নামাজ আদায় করা উত্তম। মহল্লার মসজিদ উত্তম, আমার মসজিদের (মসজিদে নববির) চেয়ে।’ এ কথা শোনার পর উম্মে হুমাইদ (রা.) তাঁর ঘরের নির্জন স্থানে একটি নামাজের স্থান বানাতে নির্দেশ দিলেন। সেখানেই আজীবন নামাজ আদায় করতে লাগলেন। এ অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। (মুসনাদে আহমদ: ২৭০৯০; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৬৮৯, হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.)-এর মতে হাদিসটি হাসান। ফাতহুল বারি: ২/২৯০)

আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘জামাতে জুমার নামাজ পড়া প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অকাট্য ওয়াজিব, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়।’ (আবু দাউদ: ১০৬৭ (হাদিসটি ইমাম বুখারি ও মুসলিম (রহ.)-এর শর্ত অনুযায়ী সহিহ; আল মুস্তাদরাক: ১/২৮৮)

উল্লিখিত হাদিসগুলো থেকে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পুরুষদের দায়িত্ব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়া, আর মহিলাদের দায়িত্ব হলো ঘরে নামাজ পড়া। এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে মহিলাদের জন্য জামাতে শরিক হওয়া ওয়াজিব, সুন্নত বা অত্যাবশ্যকীয় ছিল না; বরং শুধু অনুমতি ছিল। তবে সেটিও এমন, অপছন্দের সঙ্গে এবং শর্তসাপেক্ষে।

হজরত উম্মে হুমাইদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কথার ওপর আমল করার জন্যই মসজিদ ছেড়ে সারা জীবন বাড়ির নির্জন কক্ষে নামাজ আদায় করেছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল নারীকেও সঠিক সুন্নতের উপর সারাজীবন আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর