মহান আল্লাহর ভয়ে কান্না করা নবী-রাসুল ও সালফে সালেহিনের বৈশিষ্ট্য। ইসলামে এর মর্যাদা অনন্য। আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী মুমিনের জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পরকালে মর্যাদাপূর্ণ স্থান ও সুখময় জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।
অশ্রুসিক্ত সেই চোখকে জাহান্নাম স্পর্শ করবে না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। ১) মহান আল্লাহর ভয়ে যে চোখ কাঁদে। ২) আল্লাহ তাআলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে নির্ঘুম রাত পার করে। (তিরমিজি: ১৬৩৯)
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহ তাআলার কাছে আর কিছু নেই। আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে অশ্রুর ফোঁটা পড়ে, আল্লাহ তাআলার পথে (জিহাদে) যে রক্তের ফোঁটা নির্গত হয় এবং আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত কোনো ফরজ আদায় করতে গিয়ে যে চিহ্ন সৃষ্টি হয় (যেমন কপালে সেজদার চিহ্ন)। (তিরমিজি: ১৬৬৯)
আরও পড়ুন: ঈমানের স্বাদ পেতে হলে তিন গুণ জরুরি
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সাত ধরনের মানুষকে মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তার মধ্যে অন্যতম হলো, এমন ব্যক্তি যে আল্লাহকে নির্জনে স্মরণ করে আর তার চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত হয়। (বুখারি: ৬৮০৬)
গুনাহের কাজ করতে থাকলে হৃদয় কঠোর হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহের কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তাআলা যা বর্ণনা করেছেন- ‘কখনই না, বরং তাদের অপকর্মসমূহ তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়েছে’ (সুরা মুতাফফিফিন: ১৪) (তিরমিজি: ৩৩৩৪; ইবনে মাজাহ: ৪২৪৪; মেশকাত: ২৩৪২; সহিহুল জামে: ১৬৭০)
বিজ্ঞাপন
যাদের অন্তর কঠিন ও আল্লাহর ভয়শূন্য, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা হুঁশিয়ারি করেন, ‘দুর্ভোগ ওই লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।’ (সুরা জুমার: ২২)
তাই আল্লাহভীতি জাগ্রত করতে হবে। আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তওবা করতে হবে। আমরা অনেকে মনে করি, আমরা পাপের সাগরে ডুবে গেছি, আল্লাহ আমাদের হয়তো ক্ষমা করবেন না; এগুলো ভুল ধারণা। তিনি দয়ার সাগর। বান্দার এক বিন্দু অনুশোচনার অশ্রু তিনি সহ্য করতে পারেন না। তাই এক ফোঁটা অশ্রু দিয়েই তিনি বান্দার জীবনের সকল গুনাহ ধুয়ে সাফ করে দেন। জাহান্নামকে চিরতরে হারাম করে দেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)
আরও পড়ুন: ১০০ খুন করেও আল্লাহ’র ক্ষমা পেয়েছেন যিনি
রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবিদের বেশি বেশি কান্না করার উপদেশ দিতেন। কেননা একজন মুমিনের জন্য সেটাই উচিত। মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ যেখানে বান্দাকে গুনাহের জন্য মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারেন, সেখানে করে যাচ্ছেন রহমত, দিয়ে যাচ্ছেন সুযোগ ও অবারিত সুবিধা; ভাবতেই তো মুমিনের চোখ দিয়ে পানি চলে আসার কথা। আবু জার (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—
‘..আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কম হাসতে, বেশি কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়ী-ঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে এবং চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে যে- আল্লাহর শপথ! হায়, আমি যদি একটি গাছ হতাম এবং তা কেটে ফেলা হত!’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৯০; মেশকাত: ৫৩৪৭; সহিহাহ: ১৭২২)
অতএব আমাদের উচিত, মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে কৃত গুনাহর জন্য তওবা করা । যেকোনো সমস্যায়, দুশ্চিন্তায় মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। ইনশাআল্লাহ, এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের সব পাপ ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।