শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

১০০ খুন করেও আল্লাহ’র ক্ষমা পেয়েছেন যিনি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২০ এএম

শেয়ার করুন:

১০০ খুন করেও আল্লাহ’র ক্ষমা পেয়েছেন যিনি

আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি ইচ্ছা করলে বড় পাপীকেও ক্ষমা করেন। তবে এক্ষেত্রে বান্দার আন্তরিক তওবাই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন সহিহ রেওয়ায়েতে এমনই এক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে বান্দাকে তওবা করার আগেই ক্ষমা করেছেন দয়াময় প্রভু। ঘটনাটি হলো—

বনি ইসরাইলের এক লোক ৯৯ মানুষকে হত্যা করেছিলেন। পরে অনুতপ্ত হয়ে তিনি তওবা করার চিন্তাভাবনা করলেন। পরামর্শ নিতে একজন আবিদের কাছে গেলেন। (আবিদ হলেন— যিনি সৎ ও সরল পথে আছেন তবে আলেমের মতো শরিয়তের গভীর জ্ঞান নেই) লোকটি আবিদকে বললেন, "আমি ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছি, আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?" আবিদ বললেন, "আল্লাহ তাআলা কিছুতেই তোমাকে ক্ষমা করবেন না!" এ কথা শুনে লোকটি সেই আবিদকেও খুন করে ফেললেন!


বিজ্ঞাপন


এরপরও তিনি তওবা করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। অনেককে জিজ্ঞাসা করে এক আলেমের খোঁজ পেলেন। সেই আলেমের কাছে গিয়ে বললেন, "আমি ১০০ মানুষকে হত্যা করেছি। আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?" জবাবে আলেম বললেন, "হ্যাঁ, আশা আছে! যদি তুমি তওবা করো। আল্লাহ তোমার জন্য তওবার দরজা খুলে রাখলে কে তোমাকে তা থেকে প্রতিরোধ করবে?"

আলেমের ফতোয়া এখানেই শেষ হয়নি। তিনি আরও বলেন, "এটি খারাপ শহর, তুমি এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে যাও যেখানে এমন লোকেরা রয়েছেন, যারা আল্লাহর ইবাদত করে। ফলে তুমিও তাদের সঙ্গে ইবাদত করতে পারবে।"

আলেমের কথা মতো তিনি অন্য শহরের দিকে রওনা হলেন। কিন্তু লোকটি সেই শহরে পৌঁছানোর আগেই তার সামনে মৃত্যু উপস্থিত। তখন মৃত্যুর ফেরেশতারা হাজির হলেন। যখন একজন ভাল লোক মারা যান তখন রূহ কবজ করার সময় রহমতের ফেরেশতারা আসেন আর যখন একজন খারাপ লোক মারা যায় তখন শাস্তির ফেরেশতারা আসেন। কিন্তু যেহেতু এক্ষেত্রে পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল না, তাই দুই দলের ফেরেশতাই আসলেন। ফেরেশতাদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হলো।

শাস্তির ফেরেস্তা বললেন, “এই লোক আমাদের, কারণ সে এখনো তওবা করেনি বা তার তওবা কবুল হয়নি! তার সদিচ্ছা ছিল বটে, কিন্তু সেখানে (অন্য শহরে) পৌঁছাতে পারেনি।” রহমতের ফেরেশতা বললেন, “না, সে তওবা করেছে এবং সেই শহরে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছে! যখন দুই দলের ফেরেশতারা এভাবে বাদানুবাদ করছিলেন তখন আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে আরেক ফেরেশতাকে পাঠালেন। তিনি তাঁদের বললেন, উভয় শহরেরই দূরত্ব পরিমাপ কর। যদি তোমরা তাকে তার নিজের শহরের কাছে পাও তবে সে জাহান্নামী আর যদি সে অন্য শহরের (ভাল লোকদের শহর) নিকটবর্তী হয়, তবে সে জান্নাতী!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রকৃতপক্ষে সে নিজের শহরের নিকটবর্তী ছিল!” কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা জমিনকে নির্দেশ দেন, তার এবং তার নিজের শহরের মধ্যকার দূরত্বকে বিস্তৃত করার। একইভাবে তার ও অন্য শহর (ভাল লোকদের শহর) মধ্যকার দূরত্বকে সংকুচিত করার!

যখন ফেরেশতারা মাপতে আসলেন। তখন তারা সেই লোককে অন্য শহরের (ভাল লোকদের) কাছেই পেলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করলেন এবং জান্নাতবাসী করলেন। সহিহ বুখারি: ৩৪৭০)

আরেক সহিহ বর্ণনায় এরূপ আছে যে, ‘“পরিমাপে ওই ব্যক্তিকে সৎ লোকদের অঞ্চলের দিকে এক বিঘত বেশি নিকটবর্তী পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে সৎ ব্যক্তিদের দেশবাসী বলে গণ্য করা হল।”

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘ওই ব্যক্তি নিজের বুকের উপর ভর করে ভালো দেশের দিকে একটু সরে গিয়েছিলেন।” (বুখারি:৩৪৭০, মুসলিম: ২৭৬৬, ইবনু মাজাহ: ২৬২৬, আহমাদ: ১০৭৭০)

 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক তওবা করার তাওফিক দিন এবং ক্ষমা নসিব করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর