পবিত্রতা বা তাহারাত নামাজের অন্যতম পূর্বশর্ত। শরীর ও পোশাক পবিত্র না থাকলে নামাজ কবুল হয় না। তাই প্রস্রাব-পায়খানার পর পবিত্রতা অর্জনের বিষয়ে ইসলামে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তবে আধুনিক সময়ে অনেক জায়গায় পানির সংকট বা ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় অনেকে শুধু টিস্যু ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে একটি সাধারণ সংশয় কাজ করে- ‘পানি থাকার পরও যদি কেউ পানি ব্যবহার না করে শুধু টিস্যু ব্যবহার করে, তাহলে কি তার অজু ও নামাজ শুদ্ধ হবে?’ এই প্রশ্নের সঠিক শরঈ সমাধান জানা জরুরি।
শরিয়তের বিধান: শুধু টিস্যু ব্যবহারে পবিত্রতা
ইসলামি বিধান অনুযায়ী, প্রস্রাবের পর পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি ছাড়া অন্যকিছু ব্যবহার করা যাবে না—এমন নির্দেশনা শরিয়তে নেই, বরং তা সুন্নত ও অধিক পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম। যদি কেউ প্রস্রাবের পর ভালোভাবে টিস্যু, ঢিলা বা কুলুখ ব্যবহার করে এবং নাপাকি সম্পূর্ণ মুছে ফেলে, তাহলে তার পবিত্রতা অর্জিত হয়ে যাবে।
পানি হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি পানি ব্যবহার না করে কেবল টিস্যু দিয়ে নিজেকে পবিত্র করে নেয়, তবুও তার অজু ও নামাজ নিঃসন্দেহে শুদ্ধ হবে। ‘পানি থাকলে পানি ব্যবহার করতেই হবে’ এমন ধারণা সঠিক নয়।
আরও পড়ুন: নামাজের সময় প্রস্রাব বেরোলে করণীয় কী
উত্তম পদ্ধতি: পানি ও টিস্যু উভয়ের ব্যবহার
যদিও শুধু টিস্যু ব্যবহারে নামাজ হয়ে যায়, তবে সুযোগ থাকলে টিস্যু ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা ইসলামে সবচেয়ে উত্তম বা মোস্তাহাব। কারণ, টিস্যু নাপাকি মুছে ফেলে, আর পানি সেই স্থানকে দুর্গন্ধমুক্ত ও চূড়ান্তভাবে পবিত্র করে। আল্লাহ তাআলা তাদেরই বেশি পছন্দ করেন, যারা অধিক সতর্কতার সঙ্গে পবিত্রতা অর্জন করেন।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে মদিনার অদূরে কুবা এলাকার মানুষদের অভ্যাস ছিল, তারা প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার পর ঢিলা-কুলুখের (তৎকালীন টিস্যুর বিকল্প) পাশাপাশি পানিও ব্যবহার করতেন। তাদের এই অভ্যাসের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- ‘সেখানে (কুবায়) এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তওবা: ১০৮)
আরও পড়ুন: যেসব কারণে অজু ভেঙে যায় যেসব কারণে ভাঙে না
এই আয়াত নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হাদিসে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারী (রা.), জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) ও আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, উল্লিখিত আয়াতটি নাজিল হলে রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনাবাসী (কুবা) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের উত্তম পবিত্রতার প্রশংসা করেছেন। তোমাদের ওই পবিত্রতা বা বিশেষ আমলটি কী?’ তারা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা নামাজের জন্য অজু করি এবং গোসল ফরজ হলে গোসল করি।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘এর সাথে কি আরও কোনো বিষয় আছে?’
তারা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আর বিশেষ কোনো বিষয় নেই, তবে আমরা শৌচাগার থেকে বের হলে (ঢিলা-কুলুখের পর) পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করি।’ তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘এটাই সেই পবিত্রতা (যে কারণে আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা করেছেন)। সুতরাং এই অভ্যাসকে তোমরা গুরুত্বের সঙ্গে ধরে রাখো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৫৫)
সারকথা হলো, প্রস্রাবের পর শুধু টিস্যু ব্যবহার করলে নামাজ হয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আল্লাহর ভালোবাসা ও অধিক সওয়াব লাভের জন্য টিস্যুর পর পানি ব্যবহার করা মুমিনের জন্য উত্তম। শরিয়ত সহজ বিষয়কে কঠিন করতে নিষেধ করেছে, আবার সাধ্যমতো উত্তম আমল করার প্রতিও উৎসাহিত করেছে।

