মহান আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা সেই বান্দাদের মধ্যেই প্রকাশ পায়, যারা তাঁর প্রতি অনুগত থাকেন। যিনি আল্লাহকে ভালোবাসতে চান, তাঁকে প্রথমে আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে; এমনকি নিজের পছন্দের বিষয়ের চেয়েও বেশি। আল্লাহর কাছে প্রকৃত ভালোবাসা সেই বান্দারই গ্রহণযোগ্য, যে নিজের নফস, প্রিয় বস্তু, ধন-সম্পদ, সন্তান বা অন্যান্য আকাঙ্ক্ষার ওপর আল্লাহর প্রিয় আমলকে প্রাধান্য দেয় এবং অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে।
কোরআনের নির্দেশ: ভালোবাসার প্রথম শর্ত আনুগত্য
আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। বলুন, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো। কিন্তু তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩১-৩২)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন সম্ভব নয়।
আল্লাহপ্রেমিকের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য
সুরা মায়েদার ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাঁর প্রেমিক বান্দাদের চারটি স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন:
বিজ্ঞাপন
১. মুমিনদের প্রতি কোমল ও দয়ালু: আল্লাহর বন্ধুদের প্রতি হৃদয়ে স্নেহ ও সহমর্মিতা থাকে।
২. কাফিরদের প্রতি দৃঢ় ও কঠোর: ঈমানের শত্রুদের প্রতি সীমারেখা রক্ষা ও দ্বীনি অবস্থানে অটল থাকা।
৩. আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা: জান, মাল ও সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত থাকা।
৪. নিন্দা বা সমালোচনার ভয় না করা: সত্যের পথে চলতে গিয়ে মানুষের কথায় ভীত না হওয়া।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের অন্তরের অবস্থা যাচাই করার মাপকাঠি। প্রশ্ন হলো- আমরা কি মুমিন ভাইদের প্রতি যথেষ্ট সদয়? কুফর ও অবিচারের বিরুদ্ধে যথেষ্ট দৃঢ়? আল্লাহর দ্বীনকে শক্তিশালীকরণে আমরা কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত?
আরও পড়ুন: আমল কবুলের ৭ লক্ষণ: কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশ্লেষণ
দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ
যারা আল্লাহকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেন, তাদের দৈনন্দিন জীবনে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়:
ইবাদতে আগ্রহ: নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নশীলতা।
সম্পর্ক ও আচরণে আল্লাহর সন্তুষ্টি: পিতা-মাতার সেবা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, দরিদ্রদের সাহায্য, মুমিনদের প্রতি সহানুভূতি।
বিশুদ্ধতা রক্ষা: শিরক, বিদআত, অহঙ্কার, হিংসা-বিদ্বেষ ও সকল প্রকার কলুষতা থেকে দূরে থাকা।
সরলতা ও আত্মত্যাগ: দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে পরকালমুখী জীবনযাপন ও নিঃস্বার্থভাবে আমল করা।
এই সমস্ত কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং তাঁর ভালোবাসা লাভের আশায় করা হয়।
সতর্কবাণী: আনুগত্যবিহীন ভালোবাসার দাবি অর্থহীন
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে না, শিরক বা বিদআতে লিপ্ত থাকে, তারা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার দাবি করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরকে প্রিয় মনে করে।’ (সুরা তাওবা: ২৩)
আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তাদেরকে বলা হয়েছিল, আল্লাহর পথে বেরিয়ে পড়ো, কিন্তু তারা বলল, যদি আমরা জানতাম যুদ্ধ হবে, তবে অবশ্যই তোমাদের অনুসরণ করতাম। তারা সেদিন ঈমানের চেয়ে কুফরির দিকেই বেশি ঝুঁকেছিল।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬৭)
ভালোবাসার আসল পরীক্ষা হলো আনুগত্য
আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার প্রকৃত পরীক্ষা হলো তাঁর আদেশ-নিষেধের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য। যে বান্দা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেয়, তার অন্তর পবিত্র, সরল ও আল্লাহর নুরে উদ্ভাসিত হয়। আল্লাহর প্রকৃত প্রেমিকগণ শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে সকল কাজ সম্পন্ন করেন এবং এর মাধ্যমেই তারা দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করেন।

