মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

খাঁটি মুমিন চেনার সহজ উপায়: অন্তরের যে বিষয়টি দেখবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

খাঁটি মুমিন চেনার সহজ উপায়: অন্তরের যে বিষয়টি দেখবেন

অন্তরের পবিত্রতাই মানুষকে সৎ পথে চালিত করে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে। এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু প্রশ্ন হলো- খাঁটি মুমিন চেনার সহজ উপায় কী? ইসলামের উত্তর হলো- অন্তর দেখুন। কারণ প্রিয়নবী (স.)-এর দৃষ্টিতে সর্বোত্তম মানুষই হলো নিষ্কলুষ অন্তরের অধিকারী।

হাদিসের আলোকে মুমিনের প্রকৃতি: সরলতাই পরিচয়

আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি উত্তরে বলেন- প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। সাহাবিরা বললেন, সত্যভাষীকে আমরা চিনি, কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? রাসুল (স.) বললেন- সে হলো পূত-পবিত্র, নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ, যার কোনো গুনাহ নেই, নেই কোনো দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা বা কপটতা।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬)

আরেক হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) বলেছেন- ‘মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়; কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ।’ (আবু দাউদ: ৪৭৯০)

এই হাদিস দুটি থেকেই স্পষ্ট- খাঁটি মুমিনের প্রথম ও প্রধান পরিচয় অন্তরের সহজ-সরল প্রকৃতি।

আরও পড়ুন: মুমিন আসলে কারা, কোরআন কী বলছে


বিজ্ঞাপন


অন্তরের পবিত্রতায় রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বারোপ

রাসুল (স.) অন্তরের পবিত্রতাকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে তিনি তাঁর সামনে কারো বিষয়ে অহেতুক অভিযোগ করাকেও অপছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন- ‘আমার সাহাবিদের কেউ যেন অন্য সাহাবি সম্পর্কে আমার কাছে কোনো অভিযোগ না করে। কারণ আমি তোমাদের কাছে প্রশান্ত অন্তরে আসতে পছন্দ করি।’ (আবু দাউদ: ৪৮৬০)

মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি: পবিত্রতাই সর্বোত্তম আমল

সুন্নাহ অনুযায়ী আগের মুসলিম মনীষীরা অন্তরের পবিত্রতা অর্জনের প্রতি তাগিদ দিতেন। ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘সর্বোত্তম আমল হলো অন্তরকে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভসহ সব কলুষ থেকে মুক্ত রাখা।’

এর কারণ হলো, এগুলো অন্তরের ব্যাধি। এই ব্যাধিগুলো মানুষের ইহকাল ও পরকালের প্রশান্তি কেড়ে নেয়, নেক আমল ধ্বংস করে এবং মানুষকে পাপের পথে ঠেলে দেয়।

কোরআনের বাণী: জান্নাতে পবিত্র অন্তরগুলোরই ঠাঁই হবে

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা দূর করব; তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদী।’ (সুরা আরাফ: ৪৩)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর আমি (আল্লাহ) তাদের অন্তর থেকে (কেয়ামতের দিন) বিদ্বেষ দূর করব, তারা ভাইয়ের মতো পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে।’ (সুরা হিজর: ৪৭)

এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট, অন্তরের রোগগুলোর স্থান জান্নাতে নেই। কোনো বান্দাকে এই রোগ নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না; বরং জান্নাতে প্রবেশের আগে তাদের অন্তরকে পূত-পবিত্র করা হবে।

আরও পড়ুন: যে ৬ গুণে ঈমান পূর্ণ হয় 

জান্নাতের পথ: পবিত্রতার মাধ্যমেই কেবল মুক্তি

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন- ‘মুমিনরা যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের ওপর আটকে রাখা হবে। পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যে জুলুম হয়েছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ২৪৪০)

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট, জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তরা হিংসা, দ্বেষ, শক্রতা, ঘৃণা ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

সহজ-সরলতাই মুমিনের আসল পরিচয়

খাঁটি মুমিন চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তার অন্তরের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা। যার অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা, কপটতা ও কলুষতা নেই, সেই হলো সত্যিকার মুমিন। এই পবিত্রতা কেবল ইহকালীন শান্তির জন্যই নয়, পরকালীন মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্যও অপরিহার্য।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর