মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভাই ভাইয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে ইসলামের ৫ নির্দেশনা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ভাই ভাইয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে ইসলামের ৫ নির্দেশনা

মানুষ সামাজিক জীব। একসঙ্গে বসবাসের কারণে ভুল বোঝাবুঝি বা ঝগড়া-বিবাদ হওয়া স্বাভাবিক। তবে ইসলাম এই বিবাদ দীর্ঘায়িত হতে নিষেধ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। এরপর যারা শিরক করে না তাদেরকে ক্ষমা করা হয়। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাইয়ের সাথে শত্রুতা বিদ্যমান। এরপর বলা হবে, এ দু’জনকে আপোষ মীমাংসা করার জন্য অবকাশ দাও।’ (মুসলিম: ২৫৬৫)

এই হাদিস প্রমাণ করে, আল্লাহর কাছে শান্তি ও সম্প্রীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।


বিজ্ঞাপন


১. আত্মসংযম ও রাগ নিয়ন্ত্রণ

দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রথম পদক্ষেপ হলো নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘প্রকৃত শক্তিশালী ব্যক্তি সে নয়, যে কুস্তিতে অপরকে হারায়। বরং যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে প্রকৃত শক্তিশালী।’ (বুখারি: ৬১১৪)

ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদ পরিহারকারীর জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। (তিরমিজি: ১৯৯৩) রাগ নিয়ন্ত্রণ শুধু দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রথম ধাপই নয়, এটি ঈমানেরও পরিচয়।

২. স্বতঃপ্রণোদিত মীমাংসার উদ্যোগ

ইসলাম স্বতঃপ্রণোদিতভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করে। হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬০৭৬)

নিজের ভুল হলে ক্ষমা চাওয়া, সালাম দেওয়া বা ছোট উপহার আদান-প্রদান সম্পর্কের সংকট মেটাতে সহায়ক। রাসুলুল্লাহ (স.) একাধিক হাদিসে মুসলমানদেরকে ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করা, সালাম দেওয়া ও কল্যাণকামনা করা এবং হাদিয়া আদান-প্রদান করতে উৎসাহিত করেছেন, কারণ এসবের কারণে ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং সুসম্পর্ক তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: মুমিনের বিশেষ ৪ গুণাবলী

৩. তৃতীয় পক্ষের ন্যায়ভিত্তিক মধ্যস্থতা

যখন দ্বন্দ্ব ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিরসন হয় না, ইসলাম মধ্যস্থতার নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘মুমিনদের দুটি দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করো। যদি ফিরে আসে, তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করো।’ (সুরা হুজরাত: ৯) মধ্যস্থতাকারীকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।

৪. রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বাস্তব দৃষ্টান্ত অনুসরণ

রাসুলুল্লাহ (স.) দ্বন্দ্ব নিরসনের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সময় হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কোরাইশ গোত্রগুলোর তীব্র দ্বন্দ্ব তিনি এমনভাবে সমাধান করলেন যে সবাই সন্তুষ্ট হয়েছিল। তিনি বলতেন- ‘পরস্পরের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ ও সম্পর্কচ্ছেদ করো না। আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই হও।’ (মুসলিম) তাঁর জীবনই দ্বন্দ্ব নিরসনের সর্বোত্তম ম্যানুয়াল।

৫. উসকানিদাতা ও গুজব থেকে সতর্কতা

আজকের সামাজিক মাধ্যমে দ্বন্দ্ব আরও জটিল হয় উসকানিদাতাদের কারণে। ইসলাম এ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘যে লোক অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহ তাআলা তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। যে লোক অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন।’ (তিরমিজি: ১৯৪০)

আরও পড়ুন: মুমিনদের নম্র হওয়ার নির্দেশ কোরআন-হাদিসে

গুজব ছড়ানো, একপক্ষীয় কথা প্রচার করা- এসব থেকে বিরত থাকা ঈমানের দাবি। আল্লাহ বলেন- ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো ফাসিক ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা যাচাই করে দেখবে।’ (সুরা হুজরাত: ৬)

সম্প্রীতি বিনির্মাণে ইসলামি সমাজের করণীয়

  • ন্যায়নিষ্ঠ শ্রোতা হওয়া: উভয় পক্ষের কথা সম্পূর্ণ ও ধৈর্য সহকারে শোনা।
  • গোপনীয়তা ও সম্মান রক্ষা: দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে না এনে সম্মানজনক পরিবেশে সমাধান করা।
  • শান্তির দূত হওয়া: রাসুল (স.) বলেছেন, ‘সূর্য উঠে এমন প্রত্যেক দিন মানুষের মধ্যে সুবিচার করাও সদকা।’ (বুখারি: ২৭০৭)
  • ক্ষমার মহানুভবতা: প্রকৃত শক্তি ক্ষমা করা এবং প্রথমে হাত বাড়ানো।
  • দীর্ঘস্থায়ী সমাধান: সাময়িক শান্তি নয়, টেকসই সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।

শান্তিই প্রকৃত ঈমানের পরিচয়

ইসলামের শিক্ষা পরিষ্কার: দ্বন্দ্বে উসকানি নয়, মীমাংসায় হাত বাড়ানোই প্রকৃত মুমিনের পরিচয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘আমি কি তোমাদেরকে নামাজ, রোজা ও সদকার চেয়ে উত্তম কাজ প্রসঙ্গে অবহিত করবো না? সাহাবিগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন। কারণ, পরস্পর সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অর্থ হলো দ্বীন বিনাশ হওয়া।’ (তিরমিজি: ২৫০৯)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর