নম্রতা অর্থ বিনীত, ঔদ্ধত্যহীন, নিরহংকার, অবনত, নরম, কোমল, শান্তশিষ্ট প্রভৃতি। ইসলাম মানুষকে নম্র হওয়ার শিক্ষা দেয়। মানুষের সঙ্গে নম্র আচার-আচরণের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে বলেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছেন। যদি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন, তাহলে তারা আপনার আশপাশ থেকে দূরে সরে পড়ত। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন...।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘আপনি আপনার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হোন।’ (সুরা শুআরা: ২১৫)
বিজ্ঞাপন
মহান আল্লাহ বিনয়ী মানুষদের প্রশংসায় বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর বান্দা তো তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’...।’ (সুরা ফুরকান: ৬৩-৬৬)
আরও পড়ুন: ইসলামে আত্মীয় স্বজনের হক আদায়ের নির্দেশনা
আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, অধীনস্থ এমনকি পশুপাখির সঙ্গেও নম্র আচরণ করার শিক্ষা দেয় ইসলাম। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) থেকে আমি দুটি কথা মনে রেখেছি, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের ওপর ‘ইহসান’ অত্যাবশ্যক করেছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে, দয়ার সঙ্গে হত্যা করবে, আর যখন জবাই করবে তখন দয়ার সঙ্গে জবাই করবে। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং তার জবেহকৃত জন্তুকে কষ্টে না ফেলে।’ (মুসলিম: ১৯৫৫)
হিশাম ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, আমি আনাস (রা.)-এর সঙ্গে হাকাম ইবনে আইয়ুবের কাছে গেলাম। তখন আনাস (রা.) দেখলেন, কয়েকটি বালক কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন, কয়েকজন তরুণ একটি মুরগি বেঁধে তার দিকে তীর ছুড়ছে। আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (স.) জীব-জন্তুকে বেঁধে এভাবে তীর ছুড়তে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি: ৫৫১৩)
বিজ্ঞাপন
অধীনস্থের সঙ্গে আচার-আচরণে নম্রতা অবলম্বন বিষয়ে নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো খাদেম যখন তার খাবার নিয়ে আসে, তখন তাকে যদি সঙ্গে না বসায় তাহলে সে যেন তাকে এক লুকমা বা দুই লুকমা খাবার দেয়। কেননা সে তার গরম ও কষ্ট সহ্য করেছে।’ (বুখারি: ৫৪৬০)
নম্রতার বিপরীত হলো কঠোরতা, উচ্ছৃঙ্খল, অহংকার, ঔদ্ধত্য। যা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা আখেরাতের নিবাস, যা আমি নির্ধারণ করি তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। মুত্তাকিদের জন্য আছে শুভ পরিণাম।’ (সুরা কাসাস: ৮৩)
আরও পড়ুন: যে পাপ করলে তাকওয়া হারিয়ে যাবে
মুমিনদের প্রতি মুমিনের বিনয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আজিল্লাতিন আলাল মুমিনিনা আইজ্জাতিন আলাল কাফিরিন’ অর্থাৎ ‘তারা মুমিনদের প্রতি খুব রহমদিল ও কাফেরদের প্রতি বড় কঠোর।’ (সুরা মায়েদা: ৫৪)
রাসুল (স.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি নম্র ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও চরিত্রহীন হয়।’ (তিরমিজি: ১৯৬৪)
নম্রতা ও বিনয় জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্য। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতি মানুষের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো সরলতার দরুণ দুর্বল প্রকৃতির লোক। মানুষ তাদের হীন, তুচ্ছ ও দুর্বল মনে করে। তারা কোনো বিষয়ে কসম করলে আল্লাহ তা সত্যে পরিণত করেন। রাসুল (স.) আরো বলেন, আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো প্রত্যেক অনর্থক কথা নিয়ে ঝগড়াকারী বদমেজাজি ও অহংকারী।’ (মুসলিম, মেশকাত: ৫১০৬)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (মুসতাদরাক হাকিম: ৪৩৫)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী। (তিরমিজি: ২৪৮৮)

