মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করে তাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে পাঠিয়েছেন। মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দিতে যুগে যুগে তিনি অসংখ্য নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন; যাঁরা ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও আল্লাহর মনোনীত পথপ্রদর্শক। তবে তাঁদের সকলের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং শেষ নবী ও রাসুল, তিনি হলেন হজরত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুলের জন্য বিশেষভাবে দুটি নাম নির্বাচন করেছেন- আহমাদ ও মুহাম্মদ। আহমাদ অর্থ: সর্বাধিক প্রশংসাকারী, মুহাম্মদ অর্থ: সর্বাধিক প্রশংসিত। এই নামগুলোর মধ্যেই নবীজি (স.)-এর জীবন, চরিত্র ও নবুয়তের মিশনের সারকথা নিহিত।
বিজ্ঞাপন
১. বিশ্বজগতের জন্য রহমত
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য পাঠিয়েছি কেবল রহমত হিসেবে।’ (সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
এই আয়াতের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে যে, নবীজি (স.) কেবল মুসলমানদের জন্য নন; বরং সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। তাঁর মাধ্যমে জুলুমের অবসান ও মানবতার মুক্তির পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাসুল (স.)-এর প্রতি অসম্মান: আল্লাহর 'জিরো টলারেন্স' নীতির রহস্য
বিজ্ঞাপন
২. মহান চরিত্রের অধিকারী
আল্লাহ তাআলা সাক্ষ্য দিয়ে বলেন- ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কালাম: ৪)
৩. সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত রাসুল
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘বলে দিন- হে মানবজাতি, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসুল।’ (সুরা আরাফ: ১৫৮) আরও ইরশাদ- ‘আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।’ (সুরা সাবা: ২৮)
৪. উম্মতের প্রতি অগাধ দয়া ও ভালোবাসা
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল; তোমাদের কষ্ট তাঁর কাছে ভারী লাগে, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি অতি সদয় ও দয়ালু।’ (সুরা তাওবা: ১২৮)
আরও বলেন- ‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয়েছেন; আপনি যদি কঠোরচিত্ত হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)
আরও পড়ুন: নবীজি দেখতে কেমন ছিলেন
৫. আল্লাহ ও ফেরেশতাদের দরুদপ্রাপ্ত
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর দরুদ পাঠান।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
৬. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের একমাত্র পথ
আল্লাহ বলেন- ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩১)
৭. মর্যাদা ও স্মরণ সমুন্নত
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘আমি আপনার মর্যাদা সমুন্নত করেছি।’ (সুরা ইনশিরাহ: ৪)
এই মর্যাদার বাস্তব প্রমাণ- মুমিনদের যাবতীয় আবশ্যিক ইবাদত আজান, ইকামত, নামাজ, খুতবা ইত্যাদিতে নবীজির নাম রয়েছে।
আরও পড়ুন: অন্য নবীদের তুলনায় প্রিয়নবীজির বিশেষত্ব
৮. সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও উজ্জ্বল প্রদীপ
আল্লাহ বলেন- ‘হে নবী, আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ।’ (সুরা আহজাব: ৪৫–৪৬)
৯. উত্তম আদর্শের চিরন্তন নমুনা
আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব: ২১)
কোরআনের পাতায় চিরঅম্লান প্রশংসা
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রশংসা মানুষের ভাষায় পূর্ণভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তাআলাই কোরআনের মাধ্যমে তাঁর প্রিয়রাসুলের মর্যাদা, গুণাবলি ও দায়িত্ব বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন।
নবীজি (স.)-কে ভালোবাসার অর্থ-
- কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা
- সুন্নাহ অনুসরণ করা
- মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয়নবী মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শ অনুযায়ী জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

