ইসলামের মূল ভিত্তি হলো তাওহিদ বা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস। পবিত্র কোরআন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা হলো সবচেয়ে বড় জুলুম, যার শাস্তি আখেরাতের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় হলো, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি সামান্যতম অসম্মান, আদবহানি বা কষ্ট প্রদানকে দুনিয়াতেই নিষিদ্ধ করেছেন। কোরআনের বহু আয়াতই এই নীতিকে প্রতিষ্ঠা করেছে।
প্রশ্ন ওঠে- আল্লাহ যেখানে নিজের সম্মানে ধৈর্য ধরেন, সেখানে রাসুলের মর্যাদা রক্ষায় কেন এতটা কঠোর ও তাৎক্ষণিক?
বিজ্ঞাপন
রাসুলুল্লাহর মর্যাদা: আল্লাহর ‘লাল রেখা’
রাসূলুল্লাহ (স.) কোনো সাধারণ ব্যক্তি নন। তিনি আল্লাহর শেষ ওহির বাহক এবং আল্লাহর দ্বীন ও বিধানের বাস্তব উদাহরণ। তাঁর প্রতি অসম্মান সরাসরি আল্লাহর বার্তা ও পরিকল্পনার প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে গণ্য হয়। রাসুলকে অপমান করা মানে আল্লাহর জীবনব্যবস্থার ভিত্তিকেই আঘাত করা।
এজন্য আল্লাহ তাআলা রাসুলের মর্যাদা রক্ষাকে দ্বীনের অখণ্ডতা রক্ষার সঙ্গে একীভূত করেছেন। এটি কেবল ব্যক্তিগত সম্মানের বিষয় নয়, বরং ইসলামের সমগ্র বিশ্বাসব্যবস্থার মর্যাদার বিষয়।
আরও পড়ুন: নবীদের মধ্যে মহানবী (স.)-এর বিশেষত্ব
বিজ্ঞাপন
কোরআনের নির্দেশনায় স্পষ্ট হুঁশিয়ারি
পবিত্র কোরআন বহু স্থানে রাসুলের মর্যাদা রক্ষায় কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। যেমন সুরা হুজরাতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘নবীর কণ্ঠস্বরের উপর তোমরা কণ্ঠস্বর উঁচু করো না।’ (সুরা হুজরাত: ২) আয়াতের শেষের দিকে বলা হয়েছে, ‘তা করলে তোমাদের (যাবতীয়) কাজকর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে, আর তোমরা টেরও পাবে না।’
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের উপর দুনিয়া ও আখেরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্ৰস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।।’ (সুরা আহজাব: ৫৭)
সুরা নিসায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে রাসুলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।’ (সুরা নিসা: ৮০) এছাড়াও সুরা লাহাবে রাসুলের চাচা আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর শত্রুতায় চিরস্থায়ী অভিশাপ এবং জাহান্নামে পাঠানোর ঘোষণা করা হয়েছে। (সুরা লাহাব: ১–৫)
রহস্য ও গভীর হেকমত
কেন আল্লাহ নবীজির সম্মানের ব্যাপারে এতটা কঠোর? এর মধ্যে গভীর হেকমত লুকানো আছে:
দ্বীনের গ্রহণযোগ্যতা রক্ষা: ইসলামের সত্যতা মানুষের কাছে পৌঁছেছে রাসুলের চরিত্র, সততা ও আমানতদারির মাধ্যমে। তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হলে বিশ্বাস দুর্বল হতো।
ঈমানের শক্ত ভিত্তি: রাসুলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না। সম্মানহানি সরাসরি ঈমানের মূল ভিত্তিতে আঘাত আনে।
চিরন্তন আদর্শ প্রতিষ্ঠা: রাসুল (স.) ‘উসওয়াতুন হাসানা’ তথা মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁর চরিত্র ও আচরণকে সর্বযুগে অনুকরণীয় করতে মর্যাদা চিরকালের জন্য সুরক্ষিত।
সামাজিক নৈতিক শিক্ষা: নবীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন সমাজে ন্যায়, সত্য ও পবিত্রতার ভিত্তি স্থাপন করে। এটি নৈতিক চরিত্র গঠনের মূলনীতি।
আরও পড়ুন: নবীজির অনুসরণ কেমন হওয়া উচিত
মুসলিমদের করণীয়
রাসুল (স.)-এর সম্মান রক্ষার এই শিক্ষাকে আমাদের জীবনে কার্যকর করতে হবে:
- অন্তরে নবীজির প্রতি গভীর মহব্বত ও শ্রদ্ধা স্থাপন।
- কথাবার্তা, লেখালিখি, সামাজিক আচরণ ও ডিজিটাল যোগাযোগে পূর্ণ আদব বজায় রাখা।
- ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাহকে একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ।
- রাসুলে (স.)-এর সম্মানের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রূপ বা অপপ্রচারের মুখে শরিয়তসম্মত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
- নিয়মিত দরূদ ও সালাম পাঠের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক সংযোগ রক্ষা করা।
আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলের মর্যাদাকে কোরআনের চিরস্থায়ী বিধান দিয়ে সুরক্ষিত করেছেন। এটি কেবল একজন মানুষের সম্মান নয়, বরং ইসলামের সত্যতা, ঐশী বার্তার বিশুদ্ধতা এবং মানবজাতির জন্য চিরন্তন হেদায়াত রক্ষার এক মহান ব্যবস্থা। তাই রাসুলের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যই একজন মুমিনের প্রকৃত পরিচয় এবং ঈমানের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশ।

