শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিয়ে পড়াবেন কীভাবে? জেনে নিন সুন্নত পদ্ধতি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

বিবাহ পড়াবেন কীভাবে? জেনে নিন সুন্নত পদ্ধতি

ইসলামে বিবাহ একটি পবিত্র চুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এতে বর-কনের স্বাধীন সম্মতি একটি মৌলিক শর্ত। জোরপূর্বক বিবাহ ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিম্নে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিবাহ পড়ানোর সুন্নতি পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

১. বর-কনের সম্মতি অপরিহার্য

ইসলাম জোরপূর্বক বিবাহকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।’ (সুরা নিসা: ১৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) বলেছেন- ‘কোনো বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কোনো কুমারি নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কুমারির অনুমতি কীভাবে বোঝা যাবে? তিনি বললেন, ‘তার চুপ থাকাই তার অনুমতি।’ (সহিহ বুখারি: ৫১৩৬)

২. বিবাহের সময় ও স্থান

বিবাহ সুন্নাহসম্মত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়। মসজিদে এবং জুমার দিনে বিবাহ হওয়া উত্তম; এতে বিবাহের ঘোষণা ও জনসমাগম বৃদ্ধি পায়। তবে অন্য দিন ও অন্য স্থানেও শরয়িভাবে বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ।


বিজ্ঞাপন


৩. কনের অনুমতি গ্রহণ

বিবাহ পড়ানোর আগে অবশ্যই কনের কাছ থেকে স্পষ্টভাবে অনুমতি নিতে হবে। কনের সম্মতি ছাড়া কোনো বিবাহ শুদ্ধ নয়। (সহিহ মুসলিম: ১৪১৯; আলবাহরুর রায়েক: ৩/১১০; ফাতহুল কাদির: ৩/১৬১)

আরও পড়ুন: মোহরানা নিয়ে ৫ ভুল ধারণা, যা ইসলাম অনুমোদন করে না

৪. অভিভাবকের ভূমিকা ও অনুমতি

বিশেষ করে কনের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘অভিভাবক ছাড়া কোনো বিবাহ নেই।’ (সুনানে তিরমিজি: ১১০১)

৫. বিবাহের খুতবা পাঠ

বিবাহের শুরুতে সুন্নাহ অনুযায়ী বিবাহের খুতবা পাঠ করতে হবে। খুতবার কাঠামো হবে-

প্রথমে আল্লাহর হামদ ও ছানা পাঠ, এরপর নিম্নোক্ত তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা:

সুরা নিসা, আয়াত: ১, সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২, সুরা আহজাব, আয়াত: ৭০–৭১ (সুনানে আবু দাউদ: ২১১৮)

৬. ইজাব ও কবুল

খুতবা পাঠের পর কনের অভিভাবক বরের সামনে কনের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন; এটিকে ইজাব বলা হয়। এরপর বর স্পষ্টভাবে বলবে- ‘কবুল করলাম’, ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বা অনুরূপ শব্দে। এটিই কবুল।

আরও পড়ুন: দারিদ্র্য নয়, আল্লাহর ওয়াদায় বিশ্বাস: বিয়ে নিয়ে ইসলামি নির্দেশনা

৭. সাক্ষীর উপস্থিতি

বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার জন্য কমপক্ষে দুইজন ন্যায়পরায়ণ মুসলিম সাক্ষীর উপস্থিতি আবশ্যক। বর উচ্চস্বরে কবুল বলবে; তিনবার বলা উত্তম। (সহিহ বুখারি: ৯৫)

উল্লেখ্য, কবুল শুধু বরই বলবে। কনের পক্ষ থেকে অভিভাবক সম্মতি প্রদান করবেন। বর যদি বোবা হন, তবে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও কবুল করা বৈধ।

৮. সুন্নতি দোয়া

ইজাব-কবুল সম্পন্ন হওয়ার পর উপস্থিত সবাই বর-কনের জন্য নিম্নোক্ত সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে-

‘বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়র।’ অর্থ: ‘আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, তোমার ওপর বরকত নাজিল করুন এবং তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে একত্রিত করুন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০৯১)

বিবাহ একটি ইবাদত; তাই তা সুন্নাহ অনুযায়ী সম্পন্ন করাই কাম্য। বর-কনের সম্মতি, অভিভাবকের ভূমিকা, সাক্ষীর উপস্থিতি এবং সঠিক ইজাব-কবুলের মাধ্যমেই একটি বিবাহ শরয়িভাবে সম্পন্ন হয় এবং তাতে বরকত নেমে আসে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সুন্নত মোতাবেক পবিত্র দাম্পত্য জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন, ইয়া রব্বাল আলামিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর