সুখ ও শান্তি মানবজীবনের পরম কাঙ্ক্ষিত অর্জন। দুর্দশা ও হতাশায় জর্জরিত জীবনে আমরা পার্থিব বস্তুর মাঝেই তা খুঁজি এবং বারবার ব্যর্থ হই। কারণ প্রকৃত প্রশান্তির উৎস তো স্রষ্টার সান্নিধ্য ও তাঁর বিধান। ইসলামই আমাদের দেখায় সুন্দর ও শান্তিময় জীবনযাপনের পথ।
নিম্নে কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবনকে শান্তিময় করার কিছু আমল উপস্থাপন করা হলো।
বিজ্ঞাপন
১. আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও বিশ্বাস
ঈমান হলো মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস হতাশা ও অশান্তিকে দূরে রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব। ’ (সুরা নাহল: ৯৭)
আরও পড়ুন: যেসব আমলে জীবন হবে প্রাচুর্যময়
২. সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল
প্রয়োজনীয় উপায় অবলম্বন করে ফলাফল আল্লাহর ওপর সঁপে দেওয়াই তাওয়াক্কুল। এটি ঈমানের পরিপূর্ণতা আনে; প্রশান্তি আনে। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩)
৩. নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া
নিজের চেয়ে কম নেয়ামতপ্রাপ্তদের দেখলে আল্লাহর দান অনুধাবন করা সহজ হয়, যা অন্তরে তৃপ্তি আনে। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকেদের প্রতি দৃষ্টি দাও। তোমাদের চেয়ে উঁচুস্তরের লোকেদের দিকে লক্ষ্য করো না। কেননা আল্লাহর নেয়ামাতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই উত্তম পন্থা।’ (সহিহ মুসলিম: ৭৩২০)
৪. আল্লাহর জিকিরে অন্তরের প্রশান্তি
আল্লাহর স্মরণই হৃদয়ের প্রকৃত শান্তির উৎস। তিনি বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং তাদের হৃদয় আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি পায়। জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই হৃদয় শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)
আরও পড়ুন: ভালো উপার্জনের পরও বরকত না থাকার কারণ
৫. সৎকাজে পরস্পরের সহযোগিতা
সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সমাজকে শান্তিময় করে। আল্লাহ নির্দেশ দেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ায় একে অপরের সহযোগিতা করো, পাপ ও শত্রুতায় সহযোগিতা করো না।’ (সুরা মায়েদা: ২)
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মুমিন মুমিনের জন্য একই দেহের মতো; যখন তার কোনো অঙ্গ ব্যথা পায়, সমস্ত দেহই অনিদ্রা ও জ্বরে অংশ নেয়।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
৬. হিংসা পরিহার করা
হিংসা অন্তরের শান্তি কেড়ে নেয় ও নেক আমল নষ্ট করে। রাসূলুল্লাহ (স.) সতর্ক করেছেন, ‘হিংসা থেকে সাবধান থাকো, কারণ হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে ভক্ষণ করে, যেভাবে আগুন কাঠকে ভক্ষণ করে।’ (সুনান আবু দাউদ: ৪৯০৩)
৭. সবার সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ আচরণ
ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক পার্থিব ও পারলৌকিক সুখের কারণ। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, ‘আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দেব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্যকোনো ছায়া নেই।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৬)
প্রকৃত সুখ ও শান্তি আল্লাহর নৈকট্য, তাঁর বিধান মেনে চলা এবং পারস্পরিক সুসম্পর্কের মধ্যেই নিহিত। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রদর্শিত পথে চলার ও শান্তিময় জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

