দোয়া মুমিনের ঈমানি চেতনার প্রাকৃতিক প্রকাশ। এটিই সেই মাধ্যম, যার মাধ্যমে অসীমের সামনে সসীমের বিনম্র আত্মসমর্পণ ঘটে। আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে একজন বান্দা তার দুর্বলতার স্বীকারোক্তি দেয় এবং একইসঙ্গে তাঁর অসীম করুণায় অটুট বিশ্বাস স্থাপন করে। রাসুলুল্লাহ (স.) একে ‘ইবাদতের মূল’ বলে ঘোষণা করেছেন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭১)
কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী, দোয়ার মর্যাদা অসামান্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০) পবিত্র কোরআনজুড়ে বহু নবী-রাসুলের দোয়া সংরক্ষিত রয়েছে, যা আমাদের শেখায় কীভাবে, কোন ভাষায় ও কী চিন্তা নিয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে হয়। সুরা বাকারা তেমনই একটি সুরা, যেখানে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকামী চারটি অমূল্য দোয়া নিহিত আছে।
বিজ্ঞাপন
১. আল্লাহর অনুগত হওয়ার দোয়া
رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ رَبَّنَا وَ اجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَیۡنِ لَکَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّۃً مُّسۡلِمَۃً لَّکَ ۪ وَ اَرِنَا مَنَاسِکَنَا وَ تُبۡ عَلَیۡنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ
উচ্চারণ: রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না, ইন্নাকা আন্তাস সামিউল আলিম। রাব্বানা ওয়াজ‘আলনা মুসলিমাইনি লাকা, ওয়া মিন জুররিইয়াতিনা উম্মাতাম মুসলিমাতাল লাক; ওয়ারিনা মানাসিকানা, ওয়া তুব আলাইনা; ইন্নাকা আন্তাত্তাওয়াবুর রাহিম।
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত বানান এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে আপনার অনুগত একটি জাতি গড়ে তুলুন। আমাদের ইবাদতের পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা: ১২৭–১২৮)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ৩ পদ্ধতিতে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন
২. দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনার দোয়া
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া ক্বিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)
৩. ধৈর্য ও দৃঢ়তা চেয়ে দোয়া
رَبَّنَاۤ اَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرًا وَّ ثَبِّتۡ اَقۡدَامَنَا وَ انۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ
উচ্চারণ: রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরান, ওয়া ছাব্বিত আকদামানা, ওয়া নসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের ওপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা দৃঢ় রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। (সুরা বাকারা: ২৫০)
আরও পড়ুন: ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করার পদ্ধতি
৪. ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনার দোয়া
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ
উচ্চারণ: রাব্বানা লা তুআ-খিযনা ইন নাছীনা আও আখতা’না রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল ‘আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহূ আলাল্লাযীনা মিন কাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা তা-কাতা লানা বিহী ওয়া‘ফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আনতা মাওলানা ফানসুরনা‘আলাল কাওমিল কাফিরীন।
অর্থ: আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সুরা বাকারা: ২৮৬)
সুরা বাকারা শরিয়তের বিধানসমূহের সংকলন; একইসঙ্গে একজন মুমিনের অন্তরের ভাষা ও দোয়ার শ্রেষ্ঠ পাঠশালা। এসব দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অনুগত্য, দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ, বিপদের সময় ধৈর্য এবং ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করতে শেখে। নিয়মিত এসব দোয়া পাঠ ও অর্থ অনুধাবনের মাধ্যমে একজন মুসলমান নিজের ঈমানি জীবনকে আরও সুদৃঢ় ও আল্লাহমুখী করতে পারে।

