রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৩ পদ্ধতিতে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

৩ পদ্ধতিতে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন

দোয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনু মাজাহ: ৩৮২৯) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি: ২১৩৯) 

দোয়া কখনও বৃথা যায় না। তিন পদ্ধতিতে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। যখন কোনো মুমিন ব্যক্তির দোয়ায় কোনো পাপ থাকে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে দোয়া কবুল করেন। 


বিজ্ঞাপন


পদ্ধতি তিনটি হলো—১. সে যে দোয়া করেছে, হুবহু তা কবুল করে দুনিয়াতে দেওয়া হয়। ২. তার দোয়ার প্রতিদান পরকালের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ৩. দোয়ার মাধ্যমে তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)

তবে, দোয়া করার সময় তা কবুল হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা উচিত। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ (দোয়ায়) এমন কথা বলবে না যে হে আল্লাহ! আপনি যদি চান, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি যদি চান, তাহলে আমার ওপর দয়া করুন। আপনি যদি চান, তাহলে আমাকে জীবিকা দান করুন; বরং দৃঢ়তার সঙ্গে (আত্মবিশ্বাস নিয়ে) দোয়া করবে। মনে রাখবে, আল্লাহ যা চান, তা-ই করেন, তাঁকে কেউ বাধ্য করতে পারে না।’ (বুখারি: ৭৪৭৭)।

সুতরাং আত্মবিশ্বাস নিয়ে খাঁটি অন্তরে দোয়া করতে হবে। আল্লাহর সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করতে হবে। কোনো ব্যক্তি মহান আল্লাহ সম্পর্কে যে ধরনের ধারণা পোষণ করে, মহান আল্লাহ তার সঙ্গে ওই ধরনের আচরণ করেন। এক বিখ্যাত হাদিসে কুদসিতে আছে, ‘আমার প্রতি বান্দার যে ধারণা রয়েছে, আমি ওই ধারণার কাছে থাকি...।’ (সহিহ বুখারি: ৭৪০৫ ; সহিহ মুসলিম: ২৬৭৫)

আসলে আল্লাহর একটি গুণই হলো তাঁর গোস্বার চেয়ে রহমতের প্রশস্ততা বেশি। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে এসেছে— سَبَقَتْ رَحْمَتِي غَضَبِي অর্থাৎ ‘আমার রহমত আমার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে’। তাই যতই সমস্যা আসুক বা পাপ-পঙ্কিলতার কারণে জীবনকে অন্ধকার মনে হোক, আল্লাহর রহমতের আশা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে দোয়া করা থেকে গাফেল হওয়া যাবে না।


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলার এই রহমতের প্রশস্ততা সম্পর্কে খুব ভালো করে জানত ইবলিস শয়তান। তাই সে মহান আল্লাহর রাগের সময়ও দোয়া করার সাহস করেছিল। কারণ সে জানত, আল্লাহ তাআলার গোস্বা তাঁর রহমতের কাছে কিছুই না। তাই সে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময়ও দোয়া করেছিল যেন কেয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে পারে। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেছিলেন। কারণ, আল্লাহর বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে- দোয়া কবুল করা। অহংকারবশত যেসব বান্দা দোয়া থেকে গাফেল থাকে, তাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। অহংকারবশত যারা আল্লাহর ইবাদত করে না, তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিন: ৬০)

যেখানে ইবলিসের দোয়াকে আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেননি, সেখানে আমাদের দোয়া আল্লাহ কীভাবে ফিরিয়ে দেবেন, একটু চিন্তা করলেই উত্তর পাওয়া যায়। আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি যে মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাক, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান, তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪০)

উল্লেখ্য, দোয়ার কিছু শিষ্টাচার ও শর্ত রয়েছে, যা দোয়া কবুলের জন্য সহায়ক। যেমন— ১. আল্লাহর গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়া করা (সুরা আরাফ: ১৮০) ২. দোয়ার আগে দরুদ ((আবু দাউদ: ১৪৮১; তিরমিজি: ৩৪৭৬) ৩. কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা (তিরমিজি: ৩৩৮৭) ৪. আশা নিয়ে দোয়া করা (মুসলিম: ৬৯৮৮) ৫. অশ্রুসিক্ত হয়ে দোয়া করা (সুরা আরাফ: ৫৫) ৬. নিবিষ্ট মনে দোয়া করা (তিরমিজি: ৩৪৭৯) ৭. হারাম থেকে বেঁচে থাকা (তিরমিজি: ২৯৮৯) ৮. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ—এই দায়িত্ব পালন করা। (তিরমিজি: ২১৬৯; সহিহুল জামে: ৭০৭০) ৯. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করা (তিরমিজি: ৩৬০৪

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর