আপনি কি জানেন, যদি ফজরের নামাজ নিয়মিত না পড়েন বা সময়মতো উঠতে না পারেন, তাহলে মহান আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও নেয়ামত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন? ফজর মিস করা কেবল একটি ফরজ নামাজ বাদ দেওয়া নয়; বরং এটি দুনিয়া ও আখেরাতের বহু মূল্যবান সুযোগ হাতছাড়া করার সমতুল্য। কোরআন ও হাদিসে ফজরের নামাজকে যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তা অন্যসব নামাজ থেকে একে স্বতন্ত্র করে।
কোরআনে ফজরের সময়ের মহিমা
আল্লাহ তাআলা ফজরের সময়ের শপথ নিয়েছেন- ‘কসম ফজরের সময়ের।’ (সুরা ফজর: ১) শপথের মাধ্যমে আল্লাহ ফজরের সময়কে কতটা মর্যাদাপূর্ণ করেছেন তা স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। এছাড়া আল্লাহ বলেন- ‘সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন।’ (সুরা ইসরা: ৭৮)
ফজর কেবল নামাজের সময় নয়, এটি কোরআন পাঠ, ধ্যান ও আল্লাহর সাথে সংযোগের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়।
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়ার সব ধন-সম্পদ থেকে মূল্যবান
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও তার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)
বিজ্ঞাপন
এটি কোনো অতিরিক্ত আমল নয়; বরং ফজরের নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শত্রুর উপস্থিতিতেও নবীজি (স.) এই সুন্নত ত্যাগ করতেন না।
আরও পড়ুন: এশার নামাজ জামাতে পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
জামাতে ফজর পড়ার সওয়াব
ফজরের নামাজ জামাতে পড়লে ব্যক্তি যেন সারারাত জেগে ইবাদত করেছে। (মুসলিম: ১৩৭৭)
ফজর ও এশার নামাজ মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। যারা এই সময়ে জামাতে নামাজ পড়ে, তারা প্রকাশ্যে মুনাফিকের তালিকা থেকে মুক্ত থাকে। (বুখারি: ৬৫৭)
ফেরেশতাদের সাক্ষী
ফজরের সময় আসমানি ফেরেশতারা পালাবদল করেন। তারা আল্লাহর দরবারে বলেন, তাদেরকে নামাজরত অবস্থায় রেখে এসেছি। (বুখারি: ৫৫৫)
ফজরের নামাজে দাঁড়ালে আপনার এই ইবাদত সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর একটি বিরল সুযোগ যদিও আল্লাহ সবকিছু অবগত; মূলত ফেরেশতাদের বলার মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা ও সাক্ষ্যই এখানে মূল বিষয়।
কেয়ামতের দিন আল্লাহর দিদার প্রতিশ্রুতি
ফজরের নামাজ আদায়কারীর জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর দিদার সৌভাগ্য। সূর্য ওঠার আগের এই ইবাদতের প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে তাঁর পবিত্র চেহারা দেখাবেন। (তাফসিরে মাজহারি, সুরা কাহাফ)
শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি ও দিনের বরকত
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, শয়তানের ঘাড়ের তিনটি গিঁট খুলে যায়, আর পুরো দিনটি প্রশান্তিময় ও বরকতময় হয়।’ (দ্র. বুখারি: ১১৪২) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন- ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মাআদ: ৪/২৪১)
আরও পড়ুন: জোহরের সুন্নত নামাজের বিস্ময়কর ফজিলত
জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আছরের) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৪৬)
ফজরের এই বিশেষ সময়ের নামাজ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
একটি নামাজ, অসংখ্য বরকত
ফজরের নামাজ কেবল একটি ফরজ ইবাদতের খাতা পূরণ নয়; এটি হলো একইসঙ্গে আল্লাহর বিশেষ রহমত, ফেরেশতাদের সাক্ষী, শয়তানের কবল থেকে মুক্তি, দিনের উৎপাদনশীলতা ও বরকত, আখেরাতের চিরস্থায়ী মুক্তি এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর দিদার লাভের সমন্বয়।
তাই ফজর মিস করা মানে এই সমস্ত নেয়ামত ও বরকতকে সচেতনভাবে হারানো। আসুন, আমরা ফজরের গুরুত্ব বুঝে, যথাসাধ্য চেষ্টা করি জামাতে ফজর আদায় করে আল্লাহর অশেষ রহমতের ভাগীদার হওয়ার জন্য।

